ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চোখ হারিয়েও পড়ালেখায় উদ্দীপ্ত রয়েছেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর শনিবার জানান, গত বৃহস্পতিবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। পরদিন সকালে তার বড় বোন ফোন করে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর ফার্স্ট ক্লাস (সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ৩.০৬) পেয়েছেন। এটি শুনে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।

সিদ্দিকুর বলেন, ‘তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার আগে শাহবাগে পুলিশের টিয়ার শেলে আমার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর পরীক্ষার জন্য আর তেমন প্রস্তুতি নিতে পারিনি। পড়তে গেলে অনেক মাথা ব্যথা করতো। এরপরও থেমে থাকিনি। অনেক কষ্ট হয়েছে, বন্ধুদের দিয়ে পড়াগুলো রেকর্ড করে শুনে শুনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য আগেই আমার প্রস্তুতি থাকায় তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছি। ভালো ফলাফল হবে আমি এই প্রত্যাশাই করেছিলাম, তাই হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অনেক বন্ধু আমার চাইতে কম নম্বর পেয়েছে। চোখ ভালো থাকলে আরো অনেক ভালো করতে পারতাম। এরপরও আমি যে ফল পেয়েছি তা নিয়ে অনেক আনন্দিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার শ্রুতি লেখক হিসেবে ছিল তিতুমীর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী থাকায় একটু আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হলে আমার সে দুশ্চিন্তা কেটে যায়।’

ভালো ফল পেয়ে পড়ালেখার আগ্রহ আরো বেড়ে গেছে মন্তব্য করে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি পড়ালেখা শেষ করতে চাই। এরপর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো। বিসিএস ক্যাডার হয়ে আমি পরিবার ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’

যত কষ্টই হোক নিজেকে গড়ে তুলতে চান এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘চাকরি ও পড়ালেখার পাশাপাশি আমি ইংরেজি ও আবৃত্তি কোর্সে ভর্তি হয়েছি। মাকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তাহে তিনদিন ক্লাসে করতে যাই।’

বাংলাদেশের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি করে আর্থিক সংকট কেটে যাচ্ছে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর বলেন, ‘চোখ না থাকায় টেলিফোন অপারেটর হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বর্তমানে সকল কাজকর্ম রপ্ত করেছি। সহকর্মীরাও অনেক সহযোগিতা করেন।’ বড় মানুষ হতে শত কষ্ট সহ্য করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চান সিদ্দিকুর।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনের সময় পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে চোখে গুরুতর আঘাত পান সিদ্দিকুর রহমান। পরে তাকে সরকারি খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়।

চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ের চিকিৎসকরা চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভালো না হওয়ার কথা জানালে সিদ্দিকুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি সরকারি ওষুধ কোম্পানিতে যোগদান করতে সিদ্দিকুরের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025501251220703