ফিলিস্তিন ইস্যুতে কেনো স্পিকটি নট

সিদ্দিকুর রহমান খান |

মরুভূমির লু হাওয়া হয়তো নয়, তবে তীব্র তাপপ্রবাহে অস্থির সময় পাড়ি দিচ্ছে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া। এরই মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে কূটনৈতিক সফর শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তারই অংশ হিসেবে দুদিনের বাংলাদেশ সফল শেষে গতকাল ঢাকা ত্যাগ করেছেন তিনি। এই লু বিষয়ক আলোচনার প্রারম্ভেই দুটো বিষয়ে পাঠককে একটু নিকট অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। 

এক বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় ঈদের দিনে সাদ্দামের ফাঁসি ও বর্তমান ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে কিছু বলেছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর ঈদের দিনে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে খুন করার পর পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি ধর্মীয় সংগঠনের মোর্চা মুত্তাহিদা মজলিশে আমল তাৎক্ষণিকভাবে বলেছিলো, সাদ্দামের জন্য আমাদের সহানুভূতি না থাকলেও এটা বলতে হবে যে তিনি সুবিচার পাননি। ওই সময় জামায়াতসহ বাংলাদেশের বড় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর নীরবতা মনে আছে হয়তো অনেকেরই।

৩ জানুয়ারি, ২০০৭। বার্তা সংস্থা ইউএনবির বরাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি বিলম্বিত বিবৃতিতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেওয়া হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তানের মার্কিন ‘পুতুল’ রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই ও পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পর্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

বাংলাদেশের দুটো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহতার পরিচয়ের ঘটনাও পাঠকের মনে আছে নিশ্চয়ই। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মার্কিন সৈন্যদের ভিসাবিহীন অবাধ প্রবেশাধিকার সংবলিত ‘সোফা’ (স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট) সই ও চট্টগ্রামে কনটেইনার পোর্ট স্থাপনের অনুমতি দিতে প্রস্তুত নোবেলপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইউনূসের দূতিয়ালির কথাও পাঠক ভুলে যাননি নিশ্চয়ই।

সাদ্দামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের মতোই বাংলাদেশের জনগণকে ব্যথিত ও বিচলিত করেছিলো। একইভাবে, গত বছরের অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরাইলের হামলায় ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে খুনে অন্যান্য দেশের মানুষের মতোই বাংলাদেশের জনগণও ব্যথিত। ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা ও নিন্দা মন্দ করেছে।    

প্রশ্ন তোলা যায়, বাংলাদেশের এই জনগণের মধ্যে কি বিএনপি ও জামায়াত পড়ে? রাজনীতির কাদায় পড়া বিএনপি-জামায়াত কি এবারেও যুক্তরাষ্ট্র নামের বৃহৎ শক্তিকে রুষ্ট করতে চায় না!

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অসন্তুষ্ট হবে, এ কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি কথা না বলতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী অভিযোগ তুলে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশী করতেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি নীরব রয়েছে।  বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এছাড়া সরকারি দলের একাধিক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যও উঠে এসেছে। কিন্তু বিএনপির সভা-সমাবেশে এ ধরনের কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।

বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৯(ঘ) তে ‘মুসলিম দুনিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট রাখা ও সম্প্রসারিত করা এবং (ঙ) তে আরব ও ফিলিস্তিনি ভাইদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দান করার কথা উল্লেখ রয়েছে।   

শুধু রাজনৈতিক দল কেনো, পরিহাস এই যে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিকিয়ে দেয়া হয়েছিলে। বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথাকথিত ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের স্থল, আকাশ ও জলসীমা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ এর বিনিময়ে গার্মেন্টস পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ কোটা ও অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতার মতো বিশেষ সুবিধা পাবে। বিজিএমইএ নেতারা নব-উদ্যমে লবিং করছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে জানা নেই। বরং ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায় হোয়াইট হাউস জামায়াতে ইসলামীকে সাদা কাগজ দিয়েছিলো।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেওয়ার পর ঢাকার মূলধারার ইংরেজি ও বাংলা দৈনিকে সাংবাদিক পদে কর্মরত কতিপয় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কর্মী সাঈদীকে চাঁদে দেখে তা নিজ নিজ পত্রিকায় প্রকাশে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন! তাদের একাংশকে গত তিন-চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার নামে নেওয়া হয়েছে। তারা কিন্তু বাংলাদেশে প্রত্যন্ত ভুরুঙ্গামারীতে কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক এক অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন কি-না তা নিয়েও ফেসবুকে তোলপাড়ে রত। কিন্তু, ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্পিকটি নট। 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ - dainik shiksha ৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ - dainik shiksha বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি - dainik shiksha দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম - dainik shiksha বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি - dainik shiksha একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026178359985352