করোনায় বন্ধ থাকা স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের ম্যাগাজিন ফিসহ নানা ফিয়ের টাকা জমা দিতে হচ্ছে। এসব ফি জমা না দিলে বিনামূল্যের বই মিলছে না শিক্ষার্থীদের। মহামারির সময়ে টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায়ের ওপর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এদিকে মহামরিকালে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অভিভাবকদের এসব ফি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মহামারিতে মধ্য ও নিম্ন-আয়ের মানুষের আয় কমে গেলেও বিদ্যালয়ের ফিয়ের বিষয়ে কোনো ছাড় না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেতন-ভাতা ও উন্নয়ন বাবদ ৪২ খাত দেখিয়ে স্কুলগুলো টাকা আদায় করছে। অথচ করোনার দুর্যোগে অনেক অভিভাবকের আয় কমেছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের বরিশাল প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য মতে, বরিশাল মহানগরীতে সরকারি স্কুল ছাড়া অর্ধশত বিদ্যালয় রয়েছে। নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জগদ্বীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয়, উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অক্সফোর্ড মিশন বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার করে শিক্ষার্থী প্রতি বছর ভর্তি হয়। স্কুল ভেদে প্রতি শিক্ষার্থীকে পরবর্তী ক্লাসের ভর্তির জন্য কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। টাকা পরিশোধের রসিদসহ স্কুলে গিয়ে বই আনতে হবে বলে থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বকেয়া থাকলে আর নতুন বই দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নতুন বই নিতে হলে পুরোনো বই বিদ্যালয়ে জমা দিতে হচ্ছে। কিন্তু, বরিশালের স্কুলগুলোতে গত বছরের শুরুতে ভর্তি বাবদ ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়। এরপর আবার সারা বছরের টিউশন ফি আদায় করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের খবর দিয়ে এ টাকা আদায় করা হয়। নতুন বছরে ভর্তির জন্য আবার ৩ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। বেশি শিক্ষার্থী থাকা বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে ভর্তিতে ৩ হাজার, ২ হাজার ৫৯০ টাকা ছাড়া কোনো স্কুল শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে না। পুনঃভর্তিতে কোনো বিদ্যালয় ১ হাজার ৫০০ টাকা নিলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। টিউশন ফি ছাড়াও নানা খাত দেখিয়ে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
গত ১৮ নভেম্বর টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি ছাড়া আর কোনো ফি নেয়া যাবে না। যদি অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করা হয়, তা ফেরত দেয়া অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশা মানছেনা স্কুলগুলো। বই আটকে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় বন্ধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবকরা।
এদিকে দৈনিক শিক্ষাডটকমের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, দৌলতপুরের লালনগর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। টাকার সাথে পুরাতন বইও স্কুলে জমা দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এর আগে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিতেও টাকা নিয়েছে স্কুল। টাকা ছাড়া বই না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি সেশন চার্জ বাবদ এ টাকা নেয়া হচ্ছে।
যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায়ের এখতিয়ার স্কুলগুলোর নেই। শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনার বাইরে টাকা আদায় থেকে বিরত থাকতে স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।