এমপিওর চেক ছাড়ের খবরের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের। চেক ছাড় হলে বেতন বিল তৈরি করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সইয়ের জন্য টাকা দিতে হয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে। অনেক ভোগান্তির পরে হাতে পাওয়া যায় এমপিও নামে পরিচিত বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা।
চার দশকের বেশি সময় ধরে চলছে এমনই সীমাহীন ভোগান্তি। এর অবসানের উদ্যোগ চলছে কয়েকবছর ধরে। তবে বাস্তব রূপ দেয়া যায়নি। আবারো এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উদ্যোগ সফল হলে শিক্ষকেরা বেতন পাবেন আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি)। প্রতিমাসের ১ তারিখে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে বেতনের টাকা। ভোগান্তি পোহাতে হবে না সাড়ে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে। বেতনের টাকাই শুধু নয়, অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকাও এই ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে দেয়া হবে। যার ফলে ভোগান্তি শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা।
এদিকে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আজ মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত সভা ডেকেছে।
সূত্র জানায়, সভায় বিষয়টি বাস্তবায়নে আরো বিশদ আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের এক সভায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইএফটিতে এমপিওর টাকা দিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ করে অধিদপ্তর।
তবে সে বছরের জুন মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়ে সচিব পদমর্যাদায় অন্য দায়িত্বে চলে যান। তারপরেই মূলত ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেয়ার উদ্যোগ ঝুলে যায়। তারপর করোনার অভিঘাত। তবে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন পেতে উন্মুখ হয়ে আছেন।
বর্তমানে ত্রিশ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত সাধারণ হাইস্কুল-কলেজ ও মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওর টাকা হাতে পেতে চার দশকের পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তিনটি অধিদপ্তর থেকে এমপিওর খবর জানতে শিক্ষকদের নির্ভর করতে হয় শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সরকারি ওয়েবসাইটের ওপর। এমপিওর চেক ছাড়ের খবর প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে অধিদপ্তরগুলো থেকে চিঠি পাঠানো হয় তথ্য অধিদপ্তর এবং পত্র-পত্রিকায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ অবশ্যই ইএফটির মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
ইএফটি বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে সবাই ডিজিটাল সুবিধা পাবেন, কিন্তু শিক্ষকদের চেক-বিল নিয়ে ব্যাংকে-ব্যাংকে ঘুরতে হবে-এটা হতে পারে না। অবশ্যই তারা বেতন ইএফটিতে পাবেন।
তিনি আরো বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় সব সরকারি লেনদেন ইএফটির মাধ্যমে করতে চায়। ইতোমধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ইএফটিতে পাঠানো শুরু হয়েছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিষয়টিও বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এর আগে ৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ শিক্ষকদের বেতন এ বছরই ইএফটির মাধ্যমে দেয়ার কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আরো বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার টাকা ইএফটিতে দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীরা প্রথম কর্মদিবসে ঘরে বসে ব্যাংক হিসাবে সরাসরি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাবেন এবং তাদের ভোগান্তি কমবে।
প্রসঙ্গত, আইবাস প্লাস প্লাস (ibas++) একটি ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয্যার, যার মাধ্যমে সরকারের বাজেটপ্রণয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন, যথা-বরাদ্দ বিভাজন, অর্থ অবমুক্তি, বাজেট পুনঃউপযোজন, অনলাইনে বিল দাখিল এবং তার বিপরীতে চেক বা ইএফটির মাধ্যমে টাকা দেয়া, রাজস্ব জমার হিসাবরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংক হিসাব সমন্বয় ইত্যাদি আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।