ফেসবুকে স্ট্যাটাস : শাস্তি পেলেন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিভিন্ন কাজের জন্য আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে শাস্তি পেয়েছেন। গত ২১ এপ্রিল তাকে তিরস্কার সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে এ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়।

বিসিএস ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।’

স্ট্যাটাসটি ২০২১ সালের ৮ মার্চ প্রকাশের পরপরই তা ভাইরাল হয়।এরপর ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ারকে বিচারের আওতায় আনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৩০ জুন এ নিয়ে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। সারওয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দেননি। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ স্ট্যাটাসকে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে একে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ এবং জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

গত ২১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করার পর তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন স্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঈদের ছুটির পর গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ প্রজ্ঞাপন পাঠানোর পর তা জানাজানি হয়।

এর আগে এ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়। গত ৭ মার্চ ৩৫৮ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তিন শতাধিক সফল অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম পদোন্নতি পাননি। পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করার পরও এ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই সময় ছিল না কোনো বিভাগীয় অভিযোগ। বরং নানা সাহসী অভিযানের কারণে বিভিন্ন সময় প্রশংসা কুড়িয়েছেন এ কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, সারওয়ার আলমের ভাগ্য বিপর্যয়ের নেপথ্যে কি হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান? ২০২০ সালের অক্টোবরে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সে সময় ইরফান সেলিমকে দুটি অভিযোগে এক বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। এরপরই সারওয়ার আলম পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। এবার তাকে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে দ- দেওয়া হলো।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলার পর সারওয়ার আলম নানা কাজ করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। রোকন-উদ-দৌলা যেমন ভেজালবিরোধী অভিযান করে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, তেমনি সারওয়ার আলমও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। সব যোগ্যতা থাকার পরও রোকন-উদ-দৌলা সচিব হতে পারেননি। আর সারওয়ার আলমকে অঙ্কুরেই আটকে দেওয়া হচ্ছে।

সারওয়ার আলমের আলোচিত অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযানও রয়েছে। এসব ঘটনায় ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে অবৈধভাবে উপার্জিত ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

২০১৫ সাল থেকে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সারওয়ার আলম। তবে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ফার্মগেটের ওভারব্রিজ বাদ দিয়ে সরাসরি যারা রাস্তা পার হচ্ছিলেন, তাদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করেছিলেন তিনি। তার পরিচালিত আরও একটি অন্যতম অভিযানের হলো রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরির বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান।

যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালিয়ে সারওয়ার আলম অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন।

২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাতিরপুলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নকল করে বাংলাদেশে উৎপাদনের কারখানায় হানা দেন সারওয়ার আলম। হাতেনাতে ধরে জরিমানা এবং দুজনকে জেল দেন তিনি।

মহামারীর শুরু থেকেই করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর মান, সরবরাহ ও দাম মনিটরিংয়ে মাঠে একজন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে তৎপর ছিলেন সারওয়ার আলম।

ঢাকায় যখন বিভিন্ন কিশোর অপরাধী ও গ্যাংয়ের হাতে হত্যাকা-, চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায়, তখন তাদের শনাক্তে অভিযান চালান তিনি।

গাবতলীর কোরবানির পশুর হাটেও অভিযান চালান সারওয়ার আলম। হাতেনাতে ধরেন একজন পশু চিকিৎসককে। ওই চিকিৎসক গরু মোটাতাজাকরণের স্টেরয়েড ইনজেকশন দিচ্ছিলেন। ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয় তাকে।

তিন শতাধিক অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013858079910278