জাতির বিবেক শিক্ষকরা। এ মহান পেশার পেশাজীবীদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন তাদেরই একজন। বেতন, ছুটি, অফিসের সময়সহ বিভিন্ন বিষয়ে দেয়া সে ফেসবুক পোস্টগুলোই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাস্তির মুখে পড়েছেন ওই শিক্ষক।
ওই শিক্ষকের নাম মো. মাহবুবর রহমান। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এসব ফেসবুক পোস্টে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকার বিধি লঙ্ঘন হয়েছে জানিয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। প্রাথমিকভাবে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষক মো. মাহবুবর রহমান শোকজের নোটিশ হাতে পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি ৬০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে মাধ্যমিক স্কুলের ছুটি নির্ধারিত ছিলো ৭৬ দিন। যা নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। এ পার্থক্যের বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন শিক্ষক মাহবুবর। পরে সে ছুটির তালিকা সংশোধন করে প্রাথমিকের ছুটি ৭৬ দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে শাস্তির মুখে পড়েন শিক্ষক মাহবুবর রহমান।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভ্যাকেশনাল কর্মচারী হওয়ায় ১৮০ দিন ছুটি পান। এক ফেসবুক পোস্টে তা জানিয়েছিলেন এ শিক্ষক। আর সরকারি অফিস ৪টা পর্যন্ত চললেও সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ছুটির সময় ৪টা ১৫ মিনিট নির্ধারণের সমালোচনা করেও ফেসবুক পোস্ট দেন তিনি। তাতে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩টা ১৫ মিনিটে ছুটির সময় নির্ধারণের প্রশংসা করেন। তবে এ পোস্টগুলোই কাল হয়েছে শিক্ষক মাহবুবরের জন্য।
জানা গেছে, ওই পোস্টগুলো প্রিন্ট করে শিক্ষক মাহবুবরকে শোকজ নোটিশের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকার বিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন নেতিবাচক পোস্ট করেছেন। আপনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময়সূচি নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট করেছেন। শিক্ষকদের বেতনভাতা নিয়ে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টির উপক্রম হয়েছে। যা ওই নির্দেশিকা ও সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত। তাই কেনো তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার লিখিত জবাব দাখিল করতে শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে বলেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই শিক্ষক নির্দেশিকা না মেনে ফেসবুক ব্যবহার করে নানা পোস্ট দিয়েছেন। তাই তাকে শোকজ করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি শিক্ষক মাহবুবর। তিনি বলেন, শোকজ নোটিশ পেয়েছি। সঙ্গে আমার দেয়া পোস্টগুলো প্রিন্ট করে পাঠানো হয়েছে। যথানিয়মে শোকজের জবাব দেবো। তবে এ বিষয়ে এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
জানা গেছে, শিক্ষক মাহবুবরকে গতবছর একবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো। তিনি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক অনুষ্ঠানে গিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের বক্তব্য ভিডিও করেছিলেন। সেসব ভিডিওতে একজন শ্রেষ্ঠশিক্ষিকা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সে সময় ওই শিক্ষিকাকেও বরখাস্ত করা হয়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।