ফোনে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটিকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছি : ফুলপরী

ইবি প্রতিনিধি |

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রীর নেতৃত্বে নির্যাতনের ঘটনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাননি নির্যাতনের পর থেকে পাবনার বাড়িতে অবস্থান করা প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থী।

তবে গত বুধবার দুপুরের দিকে ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে মোবাইল ফোনে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বলে জানান ফুলপরী। তিনি বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল, তাদের তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য। তখন আমি তাদের আমার নিরাপত্তার বিষয়টি জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকেও আমি বিষয়টি অবগত করি।’

‘আমার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে। তখন প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, কুষ্টিয়া শহরে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। কিন্তু রাস্তায় আমি অনিরাপদ বোধ করছি বিধায় ক্যাম্পাসে যাইনি।’ নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী ফুলপরী আরও বলেন, ‘পরে মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি আমার বক্তব্য নিয়েছে। আমি পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি, যা যা মনে আছে। আমার সঙ্গে যা যা ঘটেছে। আমি এক ঘণ্টা ৫ মিনিট ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি। তারা রেকর্ড করে নিয়েছে।’ এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবাইল ফোনে কথা বলে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান ছাত্রী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান অনিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের তদন্ত কাজ শেষ করে ফেলেছি। আমরা সরাসরি কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম। কেউ কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন আর কারও কারও সঙ্গে আমরা মোবাইল ফোনে কথা বলে তদন্ত শেষ করেছি।’

নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে ডেকেছিলাম, তার বক্তব্য দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু উনি বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত আসার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করেছিলেন। এ কারণে আমরা ফোনে কথা বলে তার অভিযোগ শুনেছি এবং সেটি লিপিবদ্ধ করেছি।’ সন্ধ্যার মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কমিটির প্রধান।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ’ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে ‘জীবননাশের হুমকিও’ দেন তারা। ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ওই ছাত্রী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার তিনি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আরও দুটি কমিটি করেছে। এর মধ্যে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041499137878418