বইমেলা তুমি কার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলা একাডেমি, প্রকাশক, পাঠিকা-পাঠক বা লেখক—বইমেলা, কার তুমি! বইমেলা আমার, তা আমি দাবি করি না এখন। পাঠিকা-পাঠকের দাবি অগ্রাহ্য করতেই রাজি নই। বাংলা একাডেমির প্রবীণ বহুদর্শী বটবৃক্ষের ছায়ায় পাটি-চাদর বিছিয়ে একা এক ২১শে ফেব্রুয়ারির এক সকালে মুক্তধারার শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহাকে বইয়ের একক মেলা করতে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। কেউ কেউ বোবাপ্রায়—হাসাহাসি করছে দেখে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আশ্চর্য কিছু দেখে বিস্মিত হওয়ার মতো একাকিত্মে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি)  কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ভাষার প্রতি ভালোবাসার আবেগে, একুশের প্রতি শ্রদ্ধায়। প্রকাশক সাহার কি শুধু ব্যাবসায়িক দৃষ্টিই ফুটেছিল সেদিন! জনগণও বা ঝাঁপিয়ে বা ঔত্সুক্য নিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিল কেন। প্রকাশকের কি শুধুই ব্যবসা? বংলা ভাষার প্রতি একটু-আধটু ভালোবাসার অশ্রু উছলে ওঠেনি! ‘যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/সে-সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’, তিনি পড়েননি তা তো স্বপ্নেও ভাবি না। সব ব্যবসায়ীর মধ্যে শুধুই লাভের-লোভের বসতি তা-ও তো বিশ্বাস করি না। তাহলে তো সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসাকে ভবিষ্যতের লগ্নি ভাবতে হয়। তা কি আপনারা মেনে নেবেন!

একুশের মাতৃভাষা আন্দোলনের শহীদদের তাহলে কী সম্বোধনে অভিষিক্ত করব! পুস্তক প্রকাশকদের তাহলে তো শুধু ব্যবসায়ী অভিধায় বিদ্ধ করা ছাড়া উপায় থাকে না! বাংলা একাডেমিকে তাহলে কী নামে সিক্ত করার পথ খুঁজব! এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী-সাহিত্যিক-সরকারকে কী নামে ডাকব! একুশে বইমেলা এবার সর্বোচ্চ বেড়েছে। মুজিববর্ষের সঙ্গে এর সম্মিলন আমাদের স্বপ্নাতুর করে তুলেছে। যে জাতি স্বপ্ন দেখে না তার উজ্জ্বল উদ্ধার কেউ জোগাতে পারে না তা-ও জানি। স্বপ্ন দেখে দেখে আমরা ২০২০ সালে এসেছি। এবারের বইমেলা থেকে তাই অনেক আশা। খুব আশা ভালো, বইমেলা থেকে পাঠক যেন বঞ্চিত বা প্রতারিত না হয়। ভালো লেখার সঙ্গে প্রকাশকের দায়বদ্ধতা গভীর। প্রকাশক পারেন লেখককে তপ্ত ও উন্মুক্ত করতে। লেখকের দায়বদ্ধতাকে উসকানি জোগাতে। বৃষ্টির সঙ্গে বজ -বিদ্যুতের আবেগ সঞ্চার করতে। আঃ, বইমেলার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের আবেগ ও সংগ্রামের যোগের মতো। এই সঙ্গে রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা এবং আদর্শ।

প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক বইমেলা দেখেন এবং অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। বইমেলার আভিজাত্য প্রকাশকরাই তুলে ধরেন এবং নির্মাণ করেন। বইমেলার নিজস্ব সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা আছে। সেই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিজস্বতা আছে, তার চরিত্র ও প্রকৃতিকে রক্ষাও বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের নৈতিক দায়িত্ব। দর্শকদের তুল্যমূল্য। এই উদ্যানকে ধ্বংস করা খুব সহজ কিন্তু আর একটি উদ্যান সৃষ্টি করা সহজ নয়। অন্তরের বইমেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে তার অঙ্গকে কোনো মূল্যে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা হবে আত্মঘাতী হওয়ার তুল্য। আমি বই ভালোবাসি, জীবন্ত উদ্যান আমার প্রিয়। জীবন্ত সব প্রাণকে রক্ষার দায়ও মানুষের এবং মানুষের।

লেখক : বিপ্রদাশ বড়ুয়া।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007072925567627