বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আয়েশা হুমায়রা নুর। বয়স সবে মাত্র ৪ পেরিয়েছে। স্কুলে নয়, মায়ের কাছেই পড়তে শিখছে ও। বই কিংবা গ্রন্থমেলা কী জিনিস এখনো বুঝে ওঠার বয়স হয়নি। তবে পিতার হাত ধরে ঠিকই ও এসেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। টই টই করে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে বইয়ের রাজ্যে। নতুন বইয়ের গন্ধে বিমোহিত ওর কোমল মন। শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই ওর পছন্দ ঠিক হয়। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মুনির হোসেন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, পিতার কাছে বায়না ধরে কিনে দেয়ার। বইপড়ুয়া বাবাও মেয়ের আবদার মিটাতে কালক্ষেপণ করতে নারাজ। কিনে দিয়েছেন একে একে চারখানা বই। স্টলের বিক্রয়কর্মীদের হাত থেকে নিজের হাতে বই পেয়ে বিষণ খুশি হুমায়রা। বাড়ি গিয়েই পড়তে বসবে বলে জানায় ও। হুমায়রার বাবা হুমায়ুন কবীর বেসরকারি এনজিও কর্মকর্তা। কাজ করছেন ঢাকার অফিসে। মেয়েকে এত ছোট অবস্থায় গ্রন্থমেলায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ করে দিতে ওকে গ্রন্থমেলায় নিয়ে এসেছি। আমি চাই ও ছোট থেকে বাঙালিয়ানা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠুক। বাংলাকে ভালোবাসতে শিখুক। দ্বিতীয়ত গ্রন্থমেলায় নিয়ে আসার কারণ হচ্ছে বইয়ের সঙ্গে তার পরিচিতি বাড়ুক। বইয়ের সঙ্গে প্রেম হোক। বই যে মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেটি বুঝতে শিখুক। বই পড়তে ভালোবাসবে, বইয়ের আলোকে নিজের জীবনকে গড়বে এবং এরই মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করবে এটাই আমার চাওয়া।’ শুধু কি হুমায়রা কিংবা তার বাবা? বইয়ের সঙ্গে মিতালী হোক সেটি কে-বা না চায়।

তবে সবার কপালেতো সে ভাগ্য জুটে না। যাদের জীবনে বই অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্থান পায়নি, তারা জীবনের কোন একসময় এসে অনুশোচনাতো করেছেন। তাই নিজের জীবনের না পাওয়া ভুলে সন্তানের সঙ্গে বইয়ের মিতালী হোক সেটিই বাবা-মায়ের আশীর্বাদ। স্কুল, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনে বই-ই সব। বইয়ের সঙ্গে মিতালী করেই তাদের চলতে হয়। যখনই বই শিক্ষার্থীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ থেকে বাদ পড়েছে, তখনই ছিটকে পড়তে হয়েছে প্রতিযোগীতার মঞ্চ থেকে। কর্মব্যস্ত জীবনেও বই-ই মানুষের সব থেকে আপনজন। অবসর কিংবা বিষণ্নতায় মানুষের বড় সঙ্গদাতা বই। বই পড়েই ভুলে থাকা যায় জীবনের শত হতাশা। তাইতো বইয়ের সঙ্গে প্রেম, বইয়ের সঙ্গে প্রণয় গড়তে চান সকলে। আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা আসলে বই কেনার ধুম লাগে বইপ্রেমীদের মধ্যে।

ব্যক্তি কিংবা দল বেধে চলে আসে গ্রন্থমেলায়। স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে বই কেনেন তারা। কেউবা বাসা থেকেই বইয়ের তালিকা তৈরি করে এনে গ্রন্থমেলা থেকে তা সংগ্রহ করেন। এরজন্য অনেকে সারা বছর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও জমিয়ে থাকেন। কথা প্রকাশের সামনে কথা হয় আইয়ুব আলী নামের বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে সারাবছরই বইমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। এসময় বাজারে আসা নতুন বই থেকে বাছাই করে কিছু কিনে থাকি। আবার অনেক সময় পুরাতন বইগুলোও এখানে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে বই সংগ্রহের জন্য বইমেলার ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল আমরা। তিনি বলেন, বই পড়তে ভালোবাসি। এটা কেমন সেটি বলে প্রকাশ করা কঠিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ছাত্রী নার্গিস আকতার বলেন, বইয়ের সঙ্গে ভালোলাগা ছোটবেলা থেকেই। স্কুলে অধ্যয়নকালেই টুকটাক বই পড়ার চেষ্টা করতাম। সে অভ্যাস দিনদিন বেড়েছে, কমেনি। বইয়ের সঙ্গে এ ভালোবাসা আমৃত্যু থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা।

এদিকে গত শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ২০১টি। মেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন। প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ১৩০ জন এবং খ-শাখায় ৭০ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও গ্রন্থমেলার আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ৭৯ জন এবং খ-শাখায় ৮৮ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026209354400635