বিদ্যালয়ে নতুন শ্রেণির বই দেওয়া হচ্ছে। মনের আনন্দে দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল তাদের একমাত্র বোন। ছোট্ট তিন শিশু শিক্ষার্থীর নতুন বই নিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে লাশ হয়ে ফিরল বোনটি।
শুক্রবার সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ছাতিয়ানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটির নাম সোহানা আক্তার। সে উপজেলার ছাতিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এবার সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছিল। ছাতিয়ানি গ্রামের দিনমজুর শাহিন সরদারের মেয়ে সোহানা।
একই বিদ্যালয়ে সোহানার দুই ভাইও পড়াশোনা করে। গতকাল তিন ভাইবোন মিলেই নতুন বই আনতে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পথেই ঘটল এ মর্মন্তুদ ঘটনা।
স্থানীয় ও ডামুড্যা থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের মতো গতকাল ছাতিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন বই দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিন ভাইবোন মিলে নতুন বই আনতে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। পথে বিদ্যালয়ের কাছেই গোসাইরহাট-শরীয়তপুর সড়কে একটি অটোরিকশা সোহানাকে চাপা দেয়। গুরুতর অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুন নাহার বলেন, বই উৎসব শুরু হওয়ার পরপরই দুর্ঘটনার সংবাদ আসে। এরপর সবাই রাস্তায় ছুটে যান। কিছুক্ষণ পর আসে শিশুটির মৃত্যুর খবর। এ সময় মুহূর্তেই বিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। বই উৎসব পরিণত হয় বিষাদে। তারপর বন্ধ করে দেন বই বিতরণ।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আমীন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল হক ও কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছ উদ্দিন বিদ্যালয়ে ছুটে যান।
সোহানার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ছাতিয়ানি গ্রামের কয়েক শ মানুষ সড়কটি এক ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ অটোরিকশাটি আটক করেছে। তবে এটির চালক ডামুড্যা পৌরসভার ফুলকুড়ি এলাকার বরকত আলী হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা।
দুপুরে ছাতিয়ানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোহানার মরদেহ বাড়ির আঙিনায় রাখা। পরিবারের সদস্যরা সেখানে বিলাপ করছেন। শিশুটির মা কাকলি বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবা শাহিন সরদার ভৈরবে দিনমজুরের কাজ করেন। তখনো তিনি বাড়িতে এসে পৌঁছাননি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আমীন বলেন, অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।