বই নেই আড্ডায় আলোচনায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দূরত্ব যতটুকুই হোক, ঢাকায় কোথাও গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসার কর্তব্য থাকে এবং এ জন্য যদি মাত্র ঘণ্টাখানেক সময় হাতে থাকে তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। আজকে (গতকাল) আমিও সেই দলে। বাংলা মোটর থেকে শাহবাগ পার হয়ে টিএসসির গেট দিয়ে বইমেলায় পৌঁছতেই বরাদ্দের সিংহভাগ সময় শেষ। কিন্তু বইমেলার টান সময় স্বল্পতাকে উপেক্ষা করায়। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত  এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদটি লিখেছেন সাঈদ জুবেরী।

বইমেলায় ঢুকতে গিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি রো ধরে লাইন ধরে এগোতে থাকি। লোক বেশি নেই। আমার সামনে পাঁচ-ছয়জন। এর মধ্যে একজনের পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার পেয়ে নিরাপত্তাকর্মী সেগুলো কেড়ে নিতে উদ্যত হলে, ছেলেটি মেলায় যাব না বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিল। তার পরেই দাঁড়ানো আরও একটি তরুণও সঙ্গী হলো ছেলেটির। বুঝলাম দুই বন্ধু বইমেলায় এসেছিল বই কিনতে অথবা নিছকই ঘুরতে।

   

আমিও মূলত ঘুরতে এসেছি। অনেকের দেখি বইমেলায় বই না কিনে ঘুরতে আসা ভিড় নিয়ে আপত্তি আছে। আমার তা লাগে না। বইমেলায় ঘুরতে এসেছি বলতেও চাপ নিই না, যেহেতু মেলা। যেহেতু এখানে কবি-লেখকদের আর তাদের ‘গ্ল্যামারটা’ দেখা যায়। যেহেতু এখানে নতুন বইয়ের, প্রচারের, খোঁজখবরের একটা বিষয় তো থাকে।

এ ছাড়া মেলায় এমনি আসতেই বা ক্ষতি কি!

সামনের দুজন কমে যাওয়ায় আমি এগিয়ে যাই। আর্চওয়ের মেটাল ডিটেক্টর পার হতেই নিরাপত্তাকর্মী কথা নেই, বার্তা নেই গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাতে গেলেই চমকে গিয়ে দু-পা পিছিয়ে যাই। সেও চমকে উঠে আর জিজ্ঞেস করে সিগারেট আছে কি না। আমি বলি নেই। কিন্তু এভাবে গায়ে হাত দেন কেন? জিজ্ঞেস করে নেবেন তো। জবাবে সে হাসে আর বলে যান আপনি।

এদিক-ওদিক বিচ্ছিন্নভাবে হাঁটতে হাঁটতে, দেখতে দেখতে বাথরুম চেপে যায়। খুঁজতে খুঁজতে মেলার শেষপ্রান্তে প্রক্ষালন কেন্দ্র খুঁজে পাই। কিন্তু আজব সেখানে জুতা পরে প্রবেশ করা যাবে না। যেতে হবে তাদের চপ্পল পরে, যেগুলো বহু লোকের পায়ে ঘুরে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। মনে পড়ল ফেইসবুকে এ নিয়ে কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ভুলে গিয়েছিলাম। বাথরুম আর সারা হলো না তলপেটে চাপের অস্বস্তি নিয়ে ঘুরতে থাকলাম বইমেলায়।

গত কয়েকটি বইমেলা আয়োজনটিতে গোছানোর প্রয়াস চোখে পড়েছিল। পরিসর যেমন বড় ছিল, তেমনি মেলায় আসা লোকজনই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরতে, বই দেখতে, আড্ডা দিতে পারছিলেন। কিন্তু এবার একেবারেই বিশৃঙ্খল অবস্থা মনে হলো। আরও দেখলাম মেলার বিভিন্ন স্থানে ধূমপান চলছে। বইমেলার গেট থেকে ফিরে যাওয়া তরুণ দুটির কথা মনে পড়ল। কর্তৃপক্ষ ধূমপায়ীদের জন্য কর্নার করে দিতে পারে। অবশ্য এই দেশে নিষিদ্ধ কিছুই তেমন একটা নিষিদ্ধ না যেহেতু, সেই সূত্রে অফিশিয়ালি ক্লিন বা অধূমপায়ী লেখক-পাঠক রেখে এমন চালিয়ে যেতে পারে। তরুণ দুটির ফিরে যাওয়াটিই সঠিক মনে হয়।

কয়েকজন পরিচিত মানুষ পেয়ে তলপেটের অস্বস্তি ভুলে থাকলাম আলাপচারিতায়। ‘আদর্শহীন বইমেলা’, প্রবাসী নারী লেখকের বই প্রত্যাহার ও সেখানে দেশের কোন কোন লেখকের নাম শোনা যাচ্ছে এসবই বলছেন প্রায় সবাই। কিন্তু ভালো কী বই আসছে বা আসবে এসব নিয়ে কোনো আলাপ শুনলাম না। এসব বলতে বলতে সবাই ‘ফুড কোর্টে’র দিকে এগিয়ে গেলাম।

চারদিক ঘেরাও করে বিচিত্র ব্যবস্থায় খাওয়া-দাওয়া চলছে। ভেতরে আর ঢুকতে ইচ্ছে হলো না। পরিচিতদের থেকে বিদায় নিয়ে ভাবলাম কফি খাব। কিন্তু তেমন ভালো কফিরও ব্যবস্থা নেই মেলায়।

ফিরব ভেবে মেলার চারদিক দেখতে দেখতে গেটের দিকে এগোতে থাকি। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম যখন বইমেলায় আসি, তখন মেলার পরিসর ছোট আর ভিড়ের চাপ আরও বেশি অনুভূত হলেও এই ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে যে বইমেলা দেখছি তাকে আমার কোনো অর্থেই আপন লাগল না। যদিও পরিসর বেড়েছে, চাকচিক্য, প্রচার সবই বেড়েছে কিন্তু গুণিতক হারে যেটা বেড়েছে সেটা বিশৃঙ্খলা। মানুষ বইমেলায় ভালো সময় কাটাতে আসবেন তা যেন আয়োজকরা মানতেই পারেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007105827331543