২৩ মে ২০২৩ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হবে। বিশ্ব শান্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদক দেয়। এই পদক বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রবর্তিত একটি অতি সম্মানজনক পদক। কারণ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী মেরি কুরি ও পিয়ের কুরি দম্পতি বিজ্ঞান সাধনা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ও তাঁদের স্মরণীয় করে রাখতে ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী মেরি কুরি ও পিয়ের কুরি দম্পতি যৌথভাবে পদার্থবিদ্যায় এবং মেরি কুরি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পুরস্কার মনোনয়ন পর্ব
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধুকে জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাঙালির জাতির জনককে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সেদিনের সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ঢাকায় দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলন আয়োজন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ব শান্তি পরিষদের শাখাগুলোর প্রতিনিধিরা এই সভায় যোগদান করেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছাড়াও আপসো, পিএলও, এএমসি সোয়াপো ইত্যাদি সংস্থার অনেক প্রতিনিধি সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন। সম্মেলনে ভারতের ৩৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলো। তাদের দলনেতা ছিলেন দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভিকে কৃষ্ণ মেনন। আর আমেরিকা থেকে অংশ নিয়েছিলেন শান্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা জন রীড।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় উন্মুক্ত চত্বরে সুসজ্জিত প্যান্ডেলে বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্ব শান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক দেন। এরপর তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ স্বাধীন বাংলাদেশে সেটিই ছিলো বঙ্গবন্ধুর প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ।
পদক গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য
পদক গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “লাখো শহীদের রক্তে সিক্ত স্বাধীন বাংলার পবিত্র মাটিতে প্রথম এশীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য আগত শান্তির সেনানীদের জানাই স্বাগতম। উপনিবেশবাদী শাসন আর শোষণের নগ্ন হামলাকে প্রতিরোধ করে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা ছিনিয়ে এনেছি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে শান্তি আর স্বাধীনতা একাকার হয়ে মিশে গেছে। আমরা মর্মে মর্মে অনুধাবন করি বিশ্বশান্তি তথা আঞ্চলিক শান্তির অপরিহার্যতা।
এই পটভূমিতে আপনারা-বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সহকর্মী প্রতিনিধিরা আমাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করেছেন। এই সম্মান কোন ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের-‘জুলিও কুরি’- শান্তি-পদক সমগ্র বাঙালি জাতির। এটা আমার দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের। বাংলাদেশের চরম দু:সময়ে বিশ্ব শান্তি পরিষদ যেমন আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন, এদেশের মানুষও ঠিক একইভাবে বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সাথে সহমর্মিতা জানিয়ে এসেছেন। আমি নিজে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পিকিং-এ অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলীয় শান্তি সম্মেলনের একজন প্রতিনিধি ছিলাম। বিশ্বশান্তি পরিষদের ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের স্টকহোম সম্মেলনেও আমি যোগ দিয়েছিলাম। একই সাথে এটাও আমি সুস্পষ্টভাবে উলেখ করতে চাই, বিশ্বশান্তি আমার জীবনদর্শনের মূলনীতি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, শান্তি ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ যে কোন স্থানেই হোক না কেন, তাঁদের সাথে আমি রয়েছি। আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক। বৃহৎ শক্তিবর্গ, বিশেষভাবে আগ্রাসী নীতির অনুসারী কতিপয় মহাশক্তির অস্ত্রসজ্জা তথা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে আজ এক সঙ্কটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়োগ করা হোক। তাহলে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুছে ফেলার কাজ অনেক সহজসাধ্য হবে।
আমরা সর্বপ্রকার অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দুনিয়ার সকল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে বিশ্ববাসী বলেই বিশ্বের সব দেশ ও জাতির বন্ধুত্ব কামনা করি। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, শান্তিপূর্ণসহ অবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল। তাই সামরিক জোটগুলোর বাইরে থেকে সক্রিয় নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি আমরা অনুসরণ করে চলেছি। শুধু সরকারের নীতিই নয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংহতি সুদৃঢ় করা আমাদের সংবিধানের অন্যতম অনুশাসন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আমাদের সংবিধান জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি স্তম্ভের ওপরই রচিত। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একটি শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই।’
যে কারণে বঙ্গবন্ধু এই পদক পেলেন :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিশ্বের মুক্তিকামী, নিপীড়িত, মেহনতি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা। শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারা ভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। তাঁর অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা, রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, মানবিক মূল্যবোধ, সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব বাঙালি জাতিকে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিহার করে বন্ধুত্বের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করে বিশ্বের সুনাম অর্জন করেন। একই সাথে উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি স্থাপনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে ভারত-সোভিয়েত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি ১৯৭১ এবং বাংলাদেশ-ভারত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি ১৯৭২, বাংলাদেশের মৈত্রী-সম্পর্ক এই উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি স্থাপনের কাজ করে। এর পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তির দূত। শৈশব-কৈশর থেকেই তাঁর চিন্তায়-মননে রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত শৃঙ্খল থেকে মানুষের মুক্তির ভাবনা যুক্ত হয়েছিলো। একইসাথে সর্ব-সাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তিও তাঁর জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিলো। যে কারণে তাঁকে পাওয়া যায় পূর্ব বাংলার মানুষের রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনে। তাঁর চিন্তায় শুধুই দেশের মানুষের মুক্তি।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের তরুণ নেতা শেখ মুজিব শান্তি নিয়ে কী ভেবেছেন? ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইতে তিনি লিখেছেন- ‘হঠাৎ সেপ্টেম্বর মাসে আমন্ত্রণ এলো পিকিং-এ শান্তি সম্মেলনে যোগদান করতে হবে। পাকিস্তান শান্তি কমিটি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। পূর্ব বাংলা থেকেও কয়েকজনকে যেতে হবে। ৩৭টি দেশ এতে যোগদান করবে। অনেকে বলতে পারেন কম্যুনিস্টদের শান্তি সম্মেলনে আপনারা যোগদান করবেন কেন? আপনারা তো কম্যুনিস্ট না। কথাটা সত্য যে আমরা কম্যুনিস্ট না। তথাপি দুনিয়ায় আজ যারাই শান্তি চায় তাদের শান্তি সম্মেলনে আমরা যোগদান করতে রাজি। রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন যে-ই শান্তির জন্য সংগ্রাম করবে তাদের সাথে আমরা সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে রাজি আছি, ‘আমরা শান্তি চাই’। কারণ যুদ্ধে দুনিয়ার যে ক্ষতি হয় তা আমরা জানি ও উপলব্ধি করতে পারি; বিশেষ করে আমার দেশে -যে দেশকে পরের দিকে চেয়ে থাকতে হয়, কাঁচামাল চালান দিতে হয়। যে দেশের মানুষ না খেয়ে মরে, সামান্য দরকারি জিনিস জোগাড় করতে যাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, সে দেশে যুদ্ধে যে কতখানি ক্ষতি হয় তা ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের কথা মনে করলেই বুঝতে পারবেন। কোথায় ইংরেজ যুদ্ধ করছে, আর তার জন্য আমার দেশের ৪০ লোক লোক শৃগাল কুকুরের মতো না খেয়ে মরেছে। তবুও আপনারা বলবেন, আজ তো স্বাধীন হয়েছি। কথা সত্য, ‘পাকিস্তান’ নামটা পেয়েছি; আর কতটুকু স্বাধীন হয়েছি আপনারা নিজের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।’
এরপর ধীরে ধীরে এই মানুষটিই হয়ে ওঠেন মুক্তিকামী বাঙালির শান্তির দূত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন প্রশ্ন কী হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি? তখন বঙ্গবন্ধু তার অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে, সমাজতন্ত্রের পক্ষে, বিশ্ব শান্তির পক্ষে। ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিলো জোট-নিরপেক্ষ নীতি এবং শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে সদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ। সমগ্র জীবনে শান্তির সপক্ষে এই দৃঢ় অবস্থানই তাঁকে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ এনে দেয়।
গণপরিষদের অভিনন্দন
বাঙালির জাতির জনকের এই পদক জয়ের সংবাদে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বত্র আনন্দ-উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ গণপরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার সাহেব, আজকের কার্যসূচির ১০ নম্বর বিষয় অনুযায়ী: আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সোনার বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ মুক্তি পেয়েছে, যাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলার মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বীরবিক্রমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে সোনার বাংলা মুক্ত হয়েছে, সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘বিশ্ব শান্তির জুলিও কুরি পুরস্কার’ প্রদান করেছে। আজকের এই স্বাধীন বাংলার গণপরিষদে আমরা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সে জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সোনার বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্ত হয়েছে। আজকের বিবাদমান বিশ্বের বিবেকগুলি আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-আন্দোলনে বাংলার মানুষকে যে নেতৃত্বের পথ দেখিয়েছেন, সারা বিশ্বের প্রতিটি নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষ-বঙ্গবন্ধুর সেই নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি এই পুরস্কারের জন্য। সারা বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে যাঁরা এই সম্মানে ভূষিত করেছেন, তাঁদেরকে এই পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।’
সেদিন ‘বিশ্ব শান্তির জুলিও কুরি পুরস্কার’ প্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধুকে প্রদত্ত তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
গণপরিষদের স্পিকার বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ সাহেব দিনের কার্যসূচি শেষে ‘জুলিও কুরি পুরস্কার’ উপলক্ষে পরিষদের নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরাও এই পরিষদ থেকে উক্ত পুরস্কার দেওয়ার জন্য বিশ্ব-শান্তি পরিষদকে অভিনন্দন জানিয়ে একটা প্রস্তাব পাস করতে চাই। এই প্রস্তাব গৃহীত হলো।’
ইতিপূর্বে যারা এই পদক পেয়েছেন :
বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে, মানবতার কল্যাণে শান্তির সপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে।
বঙ্গবন্ধুর আগে যারা জুলিও কুরি শান্তি পদক লাভ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন- কিউবার বিপ্লবের নেতা ও প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ভিয়েতনাম বিপ্লবের নেতা হো চি মিন, স্বাধীন প্যালেস্টাইন আন্দোলনের নেতা ইয়াসির আরাফাত, চিলির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা সালভেদর আলেন্দে, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, কবি পাবলো নেরুদা, মার্টিন লুথার কিং প্রমুখ।
লেখক : ফয়সাল আহমেদ, গবেষক