বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের নিয়োগ পরীক্ষা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে স্থগিত হয়েছে: উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। আজ এ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা, হলে সেটা কখন হবে এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় সময় পার করছে চাকরিপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে সিন্ডিকেটের বৈঠক  বসে। সন্ধ্যায় পরীক্ষা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এই পক্ষ পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানায়। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ভাবে কর্মরত থাকায় তাদেরকেই চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে। অন্যদিকে, গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে অপর একদল শিক্ষার্থী দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে। তারা অনেক রাত অব্দি উপ-উপাচার্যসহ অনেককে ঘেরাও করে রাখে। এসময় তারা কিছু সময়ের জন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ  করে দেয়। পরে গভীর রাত পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলনরত কোনও শিক্ষার্থীকে প্রশাসনিক ব্লকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বন্ধ ছিল মূল গেট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, এই পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে উপাচার্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্যও কেউ কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে বৈঠক করে উপাচার্য ও উপ উপাচার্য পদের জন্য নির্দিষ্ট লোকজনের নামও বাছাই করে ফেলেছে। তাদের নেতা দেশে ফিরে আসার পরই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিএসএমএমইউ এর মেডিকেল অফিসার নিয়োগে মোট পদ ২০০ টি। আর আবেদন জমা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টি। এরমধ্যে ৬শ’ জনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে অনুরোধ এসেছে। এছাড়া রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই চাইছেন অ্যাডহক ভিত্তিতে মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হোক।

এসব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি পরীক্ষাটা নেওয়ার জন্য। সেই লক্ষ্যে আমি প্রস্তুত। আমার পরীক্ষা বিভাগ প্রস্তুত, আমার কোন হলে কে ডিউটিতে কর্মরত থাকবে তার সিট প্ল্যান, ছাত্রদের জন্য সিট প্ল্যান এবং যারা দায়িত্বে থাকবে তাদের সিট প্ল্যানও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কতগুলো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আমাদের সিন্ডিকেট মিটিং ডাকা হয়েছিল। কারণ আমাকে গাইড করার জন্য সর্বোচ্চ সংস্থা সিন্ডিকেট। সে সিন্ডিকেট বিভিন্ন বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে  আপাতত এটি স্থগিত থাকুক এবং পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে , পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘ এরমধ্যে দেখা যাচ্ছে যে অনেকের বয়স ৩২ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তাদের অ্যাপ্লিকেশন (আবেদন) যেন ইনভ্যালিড (বাতিল) না হয় সেজন্য তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ডিকেটকে অনুরোধ করে বলি তাদের অ্যাপ্লিকেশনের বৈধতা ছয় মাস বাড়িয়ে দেন তাহলে তারা এক মাস বা দুই মাস পরে হলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। সিন্ডিকেট আমার অনুরোধ গ্রহণ করেছে। আমার এখানে সাড়ে আট হাজার পরীক্ষার্থী, তাদের হলের স্থান সংকুলানের ব্যাপার আছে। বুয়েটের কাছে আমি জুন মাসে সময় চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর হলের ব্যাপারে তাদের সুবিধা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে তারিখ ঠিক হয়েছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা তারিখটা ফাইনাল করবো। পরীক্ষা হবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ছেলেরা আমাদেরকে অবিশ্বাস করছে। পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা জানতে চায়, যাদের বয়স ৩২ পার হয়ে যাবে তাদের কী হবে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। তাদের উদ্দেশে বলছি, আমি অ্যাপ্লিক্যান্টদের (আবেদনকারীদের) জন্য ছয় মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি মানে ছয় মাস পরে পরীক্ষা হবে বিষয়টি এমন নয়। সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষার সময় নির্ধারিত হবে।’

প্রচুর তদবিরের মুখোমুখি হচ্ছেন স্বীকার করে বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, ‘তদবির তো এখানে আসতেই পারে।  আমাদের এখানে শিক্ষক যারা তাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের তদবির আসতে পারে। এটা কি দোষের কিছু? অবশ্যই আমরা স্বচ্ছ্বভাবে নিয়োগ দেবো। শুধু আমি নই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ফেয়ার, ফ্রি রিটেন (লিখিত) পরীক্ষা নাও। তারপরে যা হয় হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী  মোহাম্মদ নাসিমও একই নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর যার যার সঙ্গে আমি কথা বলেছি যারা যারা তদবির করেছে তারা আবার একথাও বলেছে লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে আপনি দেখবেন, না করলে দেখবেন না। এটাও একটা শুভ লক্ষণ। আপনারা যেমন তদবিরের প্রশ্ন করছেন, আবার যারা যারা তদবির করছে তারা লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর দেখার জন্য বলছেন। সামনে ইলেকশন, অনেকে অনেক কিছু ভাবছে। সেই সময় সিন্ডিকেট মেম্বাররা বলেছেন, পরীক্ষাটা কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিলে ভালো হয়। সেটা করা হয়েছে।’

আন্দোলনরতদের আচরণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছাত্ররা বিদ্যুৎ বন্ধ করে আবার চালু করে দিয়েছে। তারা যেমন ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা আবার ক্ষোভের প্রশমন হওয়ার পর তারা আমাদের শিক্ষকদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে গেছে। তারা এটাও করেছে।’

কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই আমার ছাত্র। সবাই আমার কলিগ। কেউ পছন্দ অপছন্দ করুক এটা চাই না। হতাশা থেকেই এই কাজটা হয়েছে। মনে করি না যে, কেউ বৈরিতা করার জন্য এটা করেছে।’

এদিকে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের কয়েকজন বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু নিয়োগ হলেও সেগুলো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তদবিরের মাধ্যমে হয়েছে। তাই ২০১৬ সাল থেকে নতুনদের নিয়োগের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। এরপর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীরা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক নিয়োগে অনুরোধ জানায়। এমনকি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাচিপের চাকরিপ্রত্যাশী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক কামরুল হাসানের আলোচনা হয়। এ সময় তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০ চিকিৎসক নিয়োগের পূর্বসিদ্ধান্ত রয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এরপর ২০১৭’র অক্টোবর মাসের ১ তারিখে ২০০ জন মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অদৃশ্য কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা বিক্ষোভ করছি।  পরীক্ষার আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমরা শুনেছি সাময়িকভাবে এই পরীক্ষাটা স্থগিত করা হয়েছে। তারা পরবর্তীতে পরীক্ষা নেবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002953052520752