সেই ১৯৯৩-৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু শিক্ষার্থী মিলিয়া পথশিশুদের জন্য ‘বঞ্চিত শিশুদের স্কুল অর্ক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিয়াছিলেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। সেইখানে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি খাদ্য ও কাজের ব্যবস্থা করা হইত। সোমবার (৪ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছাইয়া দিতেছে একটি পত্রিকার ট্রাস্ট—তাহাদের এই কর্মযজ্ঞের নাম ‘আলোর পাঠশালা’। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বহুদিন হইতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মেধা গঠনে পরিচালনা করিতেছে ‘আলোর স্কুল’ নামে একটি কার্যক্রম। পুলিশের ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ ও অভিযোগের সীমা নাই। পত্রিকায় নিয়মিতই তাহা দেখা যায়।
কিন্তু পুলিশ সদস্যদের মহত্ উদ্যোগের খবরও বিরল নহে। এইবার দেখা যাইতেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কিছু কর্মকর্তা দরিদ্র, ঝরিয়া পড়া এবং পথশিশুদের পড়ালেখা শিখাইতে গড়িয়া তুলিয়াছেন ‘আলোর স্কুল’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বুড়িগঙ্গার তীরে মনোরম পরিবেশে আলোর স্কুলের যাত্রা শুরু হয় এই বত্সরের জানুয়ারি মাসে।
পোস্তগোলার পুলিশ ফাঁড়ির একটি পরিত্যক্ত কক্ষ সংস্কার করিয়া শিক্ষক নিয়োগ দিয়া সেইখানে অল্প কিছু শিক্ষার্থীর পাঠদান শুরু হইয়াছিল। এখন আলোর স্কুল চার কক্ষের একটি টিনশেড ভবন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধশত। স্কুলটিতে শিশু শ্রেণি হইতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হইতেছে। বতর্মানে আলোর স্কুলে চারজন শিক্ষক নিযুক্ত রহিয়াছেন।
প্রতি বত্সর বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.৫ শতাংশ মানুষ গ্রাম হইতে শহরে আসিতেছে। ঢাকায় বর্তমানে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ বস্তিবাসী এবং নিশ্চিতভাবেই সংখ্যাটি বাড়িতে থাকিবে। বস্তিবাসীদের তুলনায়ও অনেক ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থা পথশিশুদের। পথশিশুদের বড়ো অংশই থাকে রাজধানী ঢাকায়।
ফেলিয়া দেওয়া খাবারেই তাহাদের ক্ষুধা মিটে। আর ডাস্টবিনের জিনিসপত্র সংগ্রহ ও বিক্রি করাই তাহাদের প্রধান পেশা। তাহারা থাকে ফুটপাত, পার্ক অথবা কোনো খোলা জায়গায়। বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা লইয়া সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নাই। কেহ বলেন ২০ লক্ষ, আবার কেহ বলেন ২৫ লক্ষ। ঢাকা শহরেই আছে কমপক্ষে ৬-৭ লক্ষ। তাহাদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে। তাহারা অবহেলা, বঞ্চনা এবং যৌন সহিংসতা, পাচারসহ বিবিধ অত্যাচারের শিকার হয়; অনেকেই আবার নানা রকম অপরাধে লিপ্ত হইয়া পড়ে।
যদিও সংবিধানে সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগের কথা বলা আছে, কিন্তু বিষয়টি এখন পর্যন্ত স্লোগানেই সীমাবদ্ধ। এই বস্তিবাসী ও পথশিশুদের জন্য কেবল সরকার নহে সমাজের সকল স্তরের মানুষেরই দায়িত্ব আছে। বস্তিবাসী ও পথশিশুদের যদি আমরা শিক্ষার আলোয় আনিতে পারি, তাহা হইলে ভবিষ্যতে অপরাধ অনেকটাই কমিয়া যাইবে। বস্তুত এই ধারণা হইতেই পুলিশ কর্মকর্তাগণ স্কুলটি চালু করিয়াছেন।
আমরা তাহাদের সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশ পুলিশের সিটিজেন চার্টার বলিতেছে, পুলিশের ‘ভিশন’ হইল সকল নাগরিককে সেবা প্রদান করা এবং বসবাস ও কর্মোপযোগী নিরাপদ বাংলাদেশ গড়িয়া তোলা। আর ‘মিশন’ হইল আইনের শাসন সমুন্নত রাখা। সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এই ঘোষিত নীতির পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্যও যদি এইভাবে পুলিশ সদস্যরা হাত বাড়াইয়া দেন, জাতি হিসাবে আমরা নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি আগাইয়া যাইব। সেই সঙ্গে পুলিশের এহেন সামাজিক কর্মকাণ্ড দেশবাসীর মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করিবে। তাহাদের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।