রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেলে মধ্যরাতে কক্ষের আলো নিভিয়ে এক ছাত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজা ইসলাম ও কর্মী মহুয়া আক্তারের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের পুরাতন হোস্টেলের ৩০৭ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর নাম মাহমুদা আক্তার কলি। তিনি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের কর্মী। অন্য ছাত্রীরা উদ্ধার করে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে রাত ৩টা নাগাদ চকবাজার থানার পুলিশ কলেজের মূল ফটকে অবস্থান নেয়।
কলেজ সূত্র জানায়, অভিযুক্ত খাদিজা ইসলাম ও মহুয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুনের অনুসারী। আর সাইমুন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে আওয়াজ ও হইচইয়ের শব্দ আসছিল। দৌড়ে গিয়ে দেখি ওই কক্ষের আলো নেভানো। মেঝেতে পড়ে আছেন মাহমুদা আক্তার কলি। আমরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করি। জানতে পারি তাঁকে তাঁর বেডমেটরা মারধর করেছেন। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফসা ইসলাম।’
নির্যাতনের শিকার মাহমুদা আক্তার কলি বলেন, ‘আমি অন্য এক রুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডা শেষে আমি আমার রুমে আসামাত্রই আমার ফোন কেড়ে নেয় মহুয়া আক্তার। কোনো কথা ছাড়াই দরজা বন্ধ করে খাদিজা আমাকে মারধর করে। কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দেয়, চুল টানে।
আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তারা কেন আমাকে মারধর করেছে বলতে পারব না। তবে আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেত্রী খাদিজা ইসলাম গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আমরা কাউকে মারধর করিনি। বরং আমাদের মারধর করা হয়েছে।’
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুন বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমরা অধ্যক্ষ ও হোস্টেল প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করছি।’
আর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার বলেন, ‘গত রাতে যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমি এসে মাহমুদা আক্তার কলিকে উদ্ধার করি। থামানোর চেষ্টা করি। ঘটনার বিষয়ে অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার আমাদের ডেকেছেন। বিষয়টি উনারা দেখবেন।’
জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহার বলেন, ‘ঘটনার রাতে খবর নিয়েছি। সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি। উভয় পক্ষকে ডেকেছি এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’