গতরাত থেকেই তীব্র গতিতে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে সঙ্গে বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দ। অবুঝ মেয়েদুটো ঘুমিয়ে আছে এখনো। আমি রেডি হচ্ছি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আবহাওয়া ভালো হলে যেতে ৪০মিনিট বা তার একটু বেশি সময় লাগে। কিন্তু এই ঝড়বৃষ্টিতে অন্তত দেড় ঘন্টা সময় লাগবে হেঁটে যেতে। অবশ্য এমনিতেও এই এলাকায় তেমন গাড়ি পাওয়া যায় না এই আবহাওয়ায় তো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। পুরো রাস্তা হেঁটে যেতে হবে জীবিকার তাগিদে। ক্লাস শুরু সকাল নয়টায়। রেডি হতে হতে বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠলো।
আমার নিজের পরিবারের এমন কেউ নেই যাকে এখানে নিয়ে আসবো মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য মা,বাবা ও শাশুড়ি তিনজনই বয়স্ক। ওনাদের জন্যও লোক দরকার দেখাশোনা করার। মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে ওনাদের কথাও সবসময় মনে পড়ে। এই বৃদ্ধ বয়সে কখন কি ঘটে। প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ির দুরত্ব শতশত মাইল ও যাতায়াত খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় দু চারদিনের ছুটিটে যাওয়া-আসা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই কেউ অসুস্থ হলেও আমি যেতে পারিনা আর আমার কিছু হলে তারাও আসতে পারেন না। মানসিক পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে হাসতেই ভুলে গেছি। শিক্ষা পরিবারের অবিভাবক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন দয়া করে নিজ জেলায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন। যেকোনো উপায়ে নিজ জেলায় ফিরতে দিন। আমাদের সবারই একটা পরিবার আছে। মা বাবা ভাই বোন আছে। সপ্তাহের অন্তত দুটো দিন যেনো পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি। এর বেশিকিছু চাই না। এত অল্প টাকায় এত দূরে পরিবার ছেড়ে মানসিক কষ্ট নিয়ে অসহায় ভাবে দিন অতিবাহিত করছি। আপনিই বলেছেন শিক্ষকরা মানসিকভাবে ভালো না থাকলে সুষ্ঠু পাঠদান সম্ভব নয়। টাকা-পয়সা কিছু চাই না শুধু পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চাই। আর পারছি না। দয়াকরে সে সুযোগটা করে দিন। শত শত বোন ও ভাইয়ের দোয়া থাকবে আপনার জন্য।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, বরগুনা