বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট

বুশরা আলম |

গতরাত থেকেই তীব্র গতিতে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে সঙ্গে বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দ। অবুঝ মেয়েদুটো ঘুমিয়ে আছে এখনো। আমি রেডি হচ্ছি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আবহাওয়া ভালো হলে যেতে ৪০মিনিট বা তার একটু বেশি সময় লাগে। কিন্তু এই ঝড়বৃষ্টিতে অন্তত দেড় ঘন্টা সময় লাগবে হেঁটে যেতে। অবশ্য এমনিতেও এই এলাকায় তেমন গাড়ি পাওয়া যায় না এই আবহাওয়ায় তো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। পুরো রাস্তা হেঁটে যেতে হবে জীবিকার তাগিদে। ক্লাস শুরু সকাল নয়টায়। রেডি হতে হতে বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠলো।

এই আবহাওয়ায় এই অবুঝ সন্তান দুটোকে একা রেখে কতটা কষ্টে যেতে হবে পেটের তাগিদে। কত হতভাগ্য মা আমি আপনারাই বলুন। আমি আমার নিজের জীবনের বাস্তব পরিস্থিতি ব্যক্ত করছি। হ্যা, আমি একজন হতভাগ্য সহকারী শিক্ষক, একজন হতভাগ্য মা ও একজন হতভাগ্য সন্তান। বেকারত্বের গ্লানি ঘোচাতে জয়েন করেছিলাম বাড়ি থেকে শতশত মাইল দূরে তৃতীয় নিয়োগচক্রে। বাড়ি কুড়িগ্রাম চাকরি বরগুনা জেলা। ভেবেছিলাম ১ম ও ২য় নিয়োগের মত চতুর্থ নিয়োগে নিজ জেলায় ফিরতে পারবো। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ৭নং ধারা বন্ধ করায় জীবনের মানেটাই পাল্টে গেলো। পুরো পরিবার কুড়িগ্রামে, স্বামী জীবিকার তাগিদে ঢাকায়, আমি ছোট দুটি মেয়ে নিয়ে একা এই জায়গায়। ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন জায়গায় প্রতি মুহূর্তে কতটা অসহায় ও সীমাহীন কষ্ট নিয়ে জীবন যাপন করছি তা আল্লাহ পাক ভালো জানে। বড় মেয়েটা ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে এখনো স্কুলে যায় না, বয়স সাড়ে চার বছর। মেয়ের স্কুল একদিকে আমার প্রতিষ্ঠান অন্যদিকে তাও আবার একথেকে দেড় ঘন্টার পথ। তাড়াতাড়ি যাওয়া-আসা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আমার জন্য। প্রতিষ্ঠানে আসার পর সম্প্রতি মুহূর্তে সংশয়ে থাকি মেয়েটা ঠিকমত স্কুলে পৌঁছাতে পেরেছে কিনা। রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি তো? ছোট মেয়েটা বাসায় ঠিকভাবে আছে তো? সারাক্ষণ এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। ছোট মেয়েটাকে মাঝে মধ্যে নিয়ে আসি আবার বাসাতেও একজনের কাছে মাঝে মধ্যে রেখে আসি।

আমার নিজের পরিবারের এমন কেউ নেই যাকে এখানে নিয়ে আসবো মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য মা,বাবা ও শাশুড়ি তিনজনই বয়স্ক। ওনাদের জন্যও লোক দরকার দেখাশোনা করার। মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে ওনাদের কথাও সবসময় মনে পড়ে। এই বৃদ্ধ বয়সে কখন কি ঘটে। প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ির দুরত্ব শতশত মাইল ও যাতায়াত খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় দু চারদিনের ছুটিটে যাওয়া-আসা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই কেউ অসুস্থ হলেও আমি যেতে পারিনা আর আমার কিছু হলে তারাও আসতে পারেন না। মানসিক পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে হাসতেই ভুলে গেছি। শিক্ষা পরিবারের অবিভাবক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন দয়া করে নিজ জেলায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন। যেকোনো উপায়ে নিজ জেলায় ফিরতে দিন। আমাদের সবারই একটা পরিবার আছে। মা বাবা ভাই বোন আছে। সপ্তাহের অন্তত দুটো দিন যেনো পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি। এর বেশিকিছু চাই না। এত অল্প টাকায় এত দূরে পরিবার ছেড়ে মানসিক কষ্ট নিয়ে অসহায় ভাবে দিন অতিবাহিত করছি। আপনিই বলেছেন শিক্ষকরা মানসিকভাবে ভালো না থাকলে সুষ্ঠু পাঠদান সম্ভব নয়। টাকা-পয়সা কিছু চাই না শুধু পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চাই। আর পারছি না। দয়াকরে সে সুযোগটা করে দিন। শত শত বোন ও ভাইয়ের দোয়া থাকবে আপনার জন্য।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, বরগুনা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ - dainik shiksha ৪০ দিনের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ - dainik shiksha বন্যা: ৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ, নিহত ২ উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha উপবৃত্তি দিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি - dainik shiksha দুর্নীতিবাজ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির আল্টিমেটাম: মর্যাদা রক্ষা কমিটি বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম - dainik shiksha বন্যা পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি - dainik shiksha একদিন ছুটি নিলেই মিলবে চার দিনের ছুটি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036540031433105