বদলে গেলো গাইবান্ধার ‘শ্রুতিকটু’ ৯ বিদ্যালয়ের নাম

দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাইবান্ধা |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাইবান্ধা : পরিবর্তন হয়ে গেল গাইবান্ধার নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম। অনেকটা শ্রুতিকটু হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসব নাম পরিবর্তন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৩ এপ্রিল প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গাইবান্ধার দুটি উপজেলার নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

  

প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার ‘গলাকাটি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘আনন্দ বাজার’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘পাগলার চর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে ‘ভোরের পাখি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘নাপিতের হাট’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে ‘থানাপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে ‘চর ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘কঞ্চিপাড়া ১নং’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘কঞ্চিপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

এ ছাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার ‘পঁচারকুড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘গিদারী কৃষ্ণচূড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে ‘পশ্চিম চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে ‘রহমাননগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘পূর্ব ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘গিদারী আনন্দনগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এর আগে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ এর সংশ্লিষ্টরা সে সময় বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত। যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার বড় অন্তরায়। এ জন্য মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী এ রকম নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত নাম পরিবর্তন করা হবে।

বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিশুদের বুনিয়াদি শিক্ষা। শিশুদের শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপের সেই বুনিয়াদি শিক্ষাঙ্গনের নাম যখন হয় ‘গলাকাটি’ ‘ধুতিচোরা’, ‘পাগলার চর’ এর মতো নাম, তখন স্বাভাবিকভাবেই নানাভাবে ট্রলের শিকার হয় ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। যেখানে শিক্ষাজীবনের প্রথম সিঁড়িতেই শিশুদের মনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ওই সব বিদ্যালয়ের নেতিবাচক নামের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সচেতনমহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রুতিকটু শোনায় এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করা হোক। অবশেষে এমন দায়িত্বশীল যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক অর্থ দাঁড়ায় এমন ধরনের দেশের ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা বোরহানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাদী হাবিবা সুলতানা বলেন, এমন কিছু বিদ্যালয়ের নাম আছে যেসব নাম উচ্চারণ করতেও মুখে বাধে। প্রতিনিয়তই শিশুরা ওইসব নাম নিয়ে ট্রলের বা ঠাট্টার শিকার হয়। সারা দেশের শ্রুতিকটু নামের বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করে নামগুলো পরিবর্তন জরুরি। ওই সব নেতিবাচক নাম পরিবর্তন করে অর্থপূর্ণ নাম রাখা হলে নরম মনের কোমলমতি শিশুরাও তাদের বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে কোণঠাসা বা লজ্জা না পেয়ে গর্ব করতে পারবে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টেছে। পাল্টে যাওয়া নামগুলো ছিল শ্রবণকটু। যা শিশুদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলত। অতি দ্রুত পাল্টে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর দেয়ালে বা সাইনবোর্ডে নাম পাল্টে দেওয়া হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই সকল পেপারসে নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, অর্থহীন বা বিদঘুটে নামগুলো থেকে উদ্দীপনা বা অনুপ্রেরণা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। যার কারণে মানুষ সন্তানের জন্য খুঁজে খুঁজে উজ্জ্বল-সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ নাম রাখেন বা ইতিহাসে যেসব নাম উজ্জ্বল বা সমৃদ্ধ সেসব নাম রাখার চেষ্টা করেন। একইরকম বিদ্যালয়গুলোর নামের বেলাতেও।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো কারণে হোক সারা দেশেই স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনের মাধ্যমে কিছু বিদ্যালয়ের বিদঘুটে বা শ্রুতিকটু নাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ওইসব নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি একটি ভালো দিক। আমি মনে করি পরিবর্তন করা এসব অর্থপূর্ণ, শ্রুতিমধুর এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ এসব নাম কোমলমতি শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে শিশুরা গর্বের সঙ্গে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করবে।

প্রসঙ্গত, গাইবান্ধায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ের বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা ৮ হাজার ২১৩ জন এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৭৩ জন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047450065612793