গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে উপজেলার লখন্ডা জীরাতলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন ১২ জন পরীক্ষার্থী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্ত স্কুলটির কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। কেউ পাস না করলেও উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের জিরাতলী গ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ৯ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) বা সরকারি বেতনভাতা পাচ্ছেন।
শুধু এ প্রতিষ্ঠানটি নয়, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশের ৪৮টি স্কুল ও মাদরাসার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪১টি মাদরাসা ও ৭টি স্কুল। ৪১টি মাদরাসার সবগুলোই এমপিও সুবিধা বা সরকারি বেতন ভাতা পাচ্ছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আর ৭টি স্কুলের বেশিরভাগই এমপিওভুক্ত। কেউ পাস করতে না পারা এ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতনভাতা বা এমপিও বন্ধ হচ্ছে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এর ৪১টি মাদরাসা ও ৭টি স্কুল। ঢাকা বোর্ডের অধীনের ২টি স্কুলে কেউ পাস করেননি।’
জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা বোর্ডগুলো পক্ষ থেকে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে অধিদপ্তরগুলো।
প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. আবুল বাশার দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তাদের তিন দফা শোকজ করবে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। শোকজের সন্তোষজনক উত্তর না পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা অনুসারে কোনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করতে হয়। মফস্বল শহরের দাখিল মাদরাসার ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হতে ১৮ জন পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়া ও ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করার বাধ্যবাধকতা আছে। আর মফস্বল এলাকার মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে ২৫ জন পরীক্ষার্থী ও ৫৫ শতাংশ পাসের হার বাধ্যতামূলক। আর প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা বাজায় রাখতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিও স্থগিত হবে। সে অনুযায়ী শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিও স্থগিত বা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা স্থগিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এ দুই অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক মো. জাকির হোসাইন বলেন, যে ৪১টি মাদরাসায় কোনো শিক্ষার্থী দাখিলে পাস করতে পারেনি তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দেখা গেছে, সবগুলো প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও কেনো বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে তাদের শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব পেলে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এমপিও নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি রয়েছে। যেগুলো এমপিওর যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ওই যোগ্যতা ধরে রাখতে না পারলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হয়। আমরা শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সারা দেশ থেকে সংগ্রহ শুরু করেছি। সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।