বন্যায় ভেসে জলোচ্ছ্বাসে ডুবছে ঝালকাঠির ৫০ গ্রামের মানুষ

পলাশ রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধি |

ভাঙছে নদী, নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাধ। ফলে বন্যায় ভাসে আর জলোচ্ছ্বাসে ডুবছে ঝালকাঠির নদী পাড়ের ৫০ গ্রামের মানুষ। তারওপর প্রতিবছর নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে অগণিত পরিবার। এ চিত্র যুগযুগ ধরে চললেও সুরক্ষায় নেই কোনো বিশেষ উদ্যোগ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বড় প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সুগন্ধা আর বিশখালি নদী দুটি ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে। শতবছর ধরে নদীর তীব্র ভাঙন গ্রাস করে চলছে জনপদ। বিশেষ করে প্রতিবছর বর্ষায় ভিটেমাটি হারাতে হয় অসংখ্য পরিবারকে। কিন্তু জেলায় নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাধ। যা রয়েছে তাও বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশিরভাগই ভেঙে গেছে। ফলে সম্প্রতি বন্যায় ও অতিবৃষ্টিতে জেলার কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম তলিয়ে যায়। চরম দুর্ভোগের পড়েন প্রায় এক লাখ মানুষ। পানি কমে যাওয়ার পর এখন জেলা সদরের দিয়াকুল, সাচিলাপুর, পোনাবালিয়া, নলছিটি উপজেলার বারইকরন, ষাটপাকিয়া, মল্লিকপুর, রাজাপুর উপজেলার পালট, মানকি সুন্দর, নাপিতেরহাট, চল্লিশ কাইনিয়া এবং কাঠালিয়া উপজেলার মরিচবুনিয়া, আমুয়া, বড় কাঠালিয়াসহ জেলার ৫০টি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সুগন্ধা ও বিশখালি নদীর ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। এসব গ্রামের মানুষকে গত ২৫ বছরে দফায় দফায় বসতভিটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। নতুন করে ভাঙনে সেই সব পরিবারে চোখে এখন দুঃস্বপ্নের ছায়া।

জেলা সদরের সুগন্ধা পাড়ের দিয়াকুল গ্রামের লিটন মাঝি বলেন, আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার আছে যারা তিনবার করে বাড়িঘর পরিবর্তন করে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি। বর্তমানে গ্রামের মসজিদ, রাস্তা, খেয়াঘাটসহ বিশাল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

চরসাচিলাপুর গ্রামের মনির তালুকদার বলেন, সাচিলাপুরসহ পাশের আরও দুটি গ্রামে শতবছর ধরেই ভাঙন চলছে। ভিটামাটি হারিয়ে আশপাশের তিন গ্রামের একশ পরিবার নিংশ্ব হয়ে গেছে। অনেকেই এখন ঘর-বাড়ি ও সফলি জমি হারিয়ে শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছে।

কাঠালিয়া উপজেলার সুজন সভাপতি ফারুক হোসেন খান বলেন, একটি বেড়ি বাঁধের অভাবে প্রতি বছর বন্যায় আমাদের ভাসতে হয়। অতি বৃষ্টি বা জোয়ারের পানিতে কাঠালিয়া লঞ্চঘাট, আমুয়া, হেতালবুনিয়াসহ রাজাপুর পযন্ত ২৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের আর শেষ থাকেনা। সেই সঙ্গে নদী ভাঙন গ্রাস করেই চলছে। বিশখালি নদীর কাঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে রাজাপুর উপজেলার জাঙ্গালিয়া নদী পযন্ত ৫০ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাধ হলে সব সমস্যারই সমাধান হয়।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সম্প্রতি জেলায় ৩৬৬ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ এবং ৭৯২ মিটার অস্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণের আওতায় জিওব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য বড় প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঝালকাঠি জেলায় ৩৫০ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার এক তৃতীয়ংশই ভাঙন আর দুর্যোগে ভেঙে গেছে। অপরদিকে জেলার কাঠালিয়া থেকে রাজাপুর উপজেলা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এবং জেলা সদর থেকে নলছিটি উপজেলা পর্যন্ত আরও ৫০ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের চাহিদা রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049359798431396