বন্যার কারণ প্রসঙ্গে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাতের ব্যাখ্যা

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

নদীর বর্তমান অবস্থা কী, পানি কী হারে বাড়ছে তা জানানোর বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চুক্তি রয়েছে। তথ্য জানানোর প্রক্রিয়া ১৯৮৯-৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে শুরু হয়, আমি তার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম সে সময়। আমার ধারণা, গোমতীর অবস্থা কী, তা ভারত জানিয়েছে। তিন-চার দিন আগে থেকেই আমাদের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো এই তথ্য জানিয়ে আসছে। আমরা বিষয়টি দেখিনি, পূর্বাভাসের তথ্য নাড়াচাড়া করি না। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আইনুন নিশাত।

 

নিবন্ধে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লাসহ ভারতের ওপারের জেলাগুলোতে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত প্রায় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি ছিল। আর যেটি বলা হচ্ছে, এ অঞ্চলে সচরাচর বন্যা হয় না। কিন্তু ৩০ বছর আগেও প্রায় প্রতিবছরই এখানে বন্যা হতো। পাঁচ-সাত বছর পর পর বড় আকারের বন্যা হতো। এ কারণে গোমতীকে বলা হতো কুমিল্লার দুঃখ। এখন বন্যা হয় না। কারণ হচ্ছে বাঁধ পানি ধরে রাখে। এই বাঁধটা ভারত করেছিল তাদের উপকারের জন্য, তাতে আমাদেরও কিছু উপকার হয়েছিল। চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়ায় আগে প্রতিবছরই বন্যা হতো, এখন হয় না। কারণ কাপ্তাই বাঁধ ওই পানি ধরে রাখে। ৩০ বছরেই আমরা কী করে ভুলে গেলাম যে প্রতিবছরই বন্যা হতো!  

বৃষ্টিপাত, নদীর পানির অবস্থা বা বাঁধ খুলে দেয়া না দেয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনে কীভাবে আছে, তা দেখার আগে দেখতে হবে আন্তর্জাতিক নদী আইন বাংলাদেশ-ভারত কি মানে? দুই দেশের কেউই মানে না। তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের কথা বলে লাভটা কী? ধরুন আমি একজনকে জোরে আঘাত করলাম, তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং প্রচণ্ড ব্যথা পেলেন। দু’জনেরই আইনের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ আছে। যিনি আঘাত পেলেন তিনি বিচার চাইতেই পারেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী আমার বিচার হওয়ার কথা। বিচার চাওয়াটা আঘাতপ্রাপ্তেরও অধিকার। আমি যদি বলি দণ্ডবিধি মানি না তাহলে তো হবে না। কিন্তু বিষয়টি যেখানে আন্তর্জাতিক, দুই দেশকে তা মানতে হবে। যে আইনটি আছে, বাংলাদেশ মানে না– তাহলে এর দোহাই দিয়ে লাভটা কী? 

দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আবহাওয়া-সংক্রান্ত যে নিয়ম-কানুন রয়েছে। আমরাও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) সদস্য, ভারতও সংস্থাটির সদস্য। ডব্লিউএমওর হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টের বৃষ্টিপাতের তথ্য ভারত সংগ্রহ করে, যেহেতু কার্যালয়টা দিল্লিতে। যে মুহূর্তে দিল্লি কার্যালয়ে ওই তথ্য পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারত তথ্য প্রদান করছে বাংলাদেশকে। 

শেষ কথা হলো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র যাই থাক, পানি নিয়ে রাজনীতি আছে। এক দেশ কতটা পানি দেবে, কতটা ছাড়বে– এটি রাজনীতির অংশ। কিন্তু এবারে যে বন্যা হচ্ছে, তা রাজনীতির অংশ নয়। 

লেখক: পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024428367614746