বন্যার ক্ষত ৩৭২৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। পিছিয়ে গেছে পরীক্ষা। অনেক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনের বন্যা শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতের দাগ রেখে গেছে।

ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর ৩ হাজার ৭২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ এখনো বন্ধ। কিছু বিদ্যালয় খোলা থাকলেও রাস্তাঘাটে পানি থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই সব এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য ও সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র পাওয়া গেছে। মাউশি ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি নেমে যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষতির চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত বা সংস্কার করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও পাঠদান বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা যায়, ২১ আগস্ট পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ১ হাজার ৫৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিদ্যালয়ই আছেই ৮৫৫টি। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

মাউশির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ক্ষতির বিবরণও দিয়েছেন। এতে দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির বিবরণ আরও যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সরেজমিন কয়েকটি বিদ্যালয়ে

দিনাজপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১৯ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ আগস্ট থেকে বন্যা শুরু হওয়ায় পরীক্ষা পিছিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৮২টি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে দিনাজপুর শহরের উপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন মিলে বিদ্যালয়টি পরিষ্কার করছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী মাঠে খেলাধুলা করছে।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জীবন ইসলাম বলে, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের পড়াশোনার খুবÿক্ষতি হইছে। স্কুলে না আসলে পড়াশোনা তো হয় না। সামনে পরীক্ষার আগে হঠাৎ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়া তো এলোমেলো হইছে।’

দিনাজপুর জিলা স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল বন্ধ। তবে অফিস খোলা রয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ১৫ আগস্ট থেকে তাঁদের বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। ২৭ আগস্ট স্কুল খোলা হবে। এত দিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

বন্যার কারণে নওগাঁয় ১৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় আরও ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম এগোচ্ছে না। ১৯ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত বন্যাকবলিত উপজেলা মান্দা, পত্নীতলা ও সদর উপজেলার অন্তত ৩০টি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষে পানি। এসব বিদ্যালয়ের কোনোটিতে হাঁটুপানি, কোনোটিতে কোমরপানি। যেসব বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি ঢোকেনি, সেগুলোতে আবার আশ্রয় নিয়েছেন বন্যাকবলিত মানুষেরা।

গতকাল দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আঙিনায় হাঁটুপানি। বোয়ালিয়াসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছে। বিকেলে মুঠোফোনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত শনিবার উপজেলার ইকরতাড়া এলাকায় ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব তলিয়ে গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করায় তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রোববার থেকে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আমিরুল ইসলাম বলেন, বন্যাকবলিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ওপর দেওয়া রয়েছে। তাঁরা উপযুক্ত মনে করলে পাঠদান চালাবেন, আর ঝুঁকি থাকলে চালাবেন না। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে সব বিদ্যালয়ে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।

সিরাজগঞ্জে ৪২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। তবে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিদ্যালয়ও খুলতে শুরু করেছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় সেগুলোতে অসুবিধা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036551952362061