সারাদেশে চলমান বন্যায় বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। অধিকাংশ স্কুল পানিতে থৈ থৈ করছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে ৪ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন পরীক্ষা বন্যার কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেসে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার। বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চরভবসুর মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানি থৈ থৈ করছে এ বিদ্যালয়ে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে। একই উপজেলার শাহাবউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে বন্যায় কয়েকদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর গতকাল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জরুরি সারাদান কেন্দ্রের (ইওসি) তথ্যমতে, বন্যার পানিতে সারাদেশে ৪ হাজার ৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে জামালপুর জেলায় ৬৮১টি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাইবান্ধা জেলায়। এখানে ১ হাজার ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলায় ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৬, বগুড়ায় ৮৯, সিরাজগঞ্জে ২৫৬, শেরপুরে ১৪৫, টাঙ্গাইলে ৮৬ ও সুনামগঞ্জে ৫৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল-কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, মাদারীপুর ও মানিকগঞ্জেও। কুড়িগ্রামে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শেরপুরে ১টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তথ্যমতে, বিভিন্ন জেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় এখনো পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো জেলায় আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করলেও কবে নাগাদ ক্লাস-পরীক্ষা চালু হবে তা এখনো অনিশ্চিত। বন্যার কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২১ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা স্থগিত করেছে। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রমতে, দেশের ১১৯টি দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র-উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসবের অনেকটিতেই বন্যাদুর্গতরা অবস্থান করছেন।
সে কারণেও এসব স্কুল-কলেজে বিঘ্ন হচ্ছে পাঠদান কর্মসূচি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারা দেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল-কলেজের তালিকা পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পাঠদান বিঘ্ন হওয়া প্রতিষ্ঠানে বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।