বন্যায় চার জেলার ১৯ স্কুল নিশ্চিহ্ন, ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বন্যায় ১১ জেলায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে চার জেলায় অন্তত ১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল দেবে গেছে, দরজা, জানালা, বেঞ্চ ও টেবিল পানিতে ডুবে থেকে নষ্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর দিক থেকে শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।

ডুবে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো পুরোপুরি পাঠদান শুরু করা যায়নি। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। কোথাও কোথাও বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বাড়ি ও খোলা স্থানে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুব কম। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালু করা সম্ভব হয়েছে সেখানেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। আসা-যাওয়ার পথ বিধ্বস্ত থাকায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারছে না।

কবলিত এলাকার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের হিসাব সংগ্রহ করা হয়েছে। বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় পত্র দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে বিকল্প পন্থায় বাড়তি পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—

সিলেটের ২০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছয়টি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটির দেয়াল, কোনোটির মেঝে ভেঙে গেছে। এ ছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের দেয়ালের নিম্নাংশ, দরজা, জানালা, বেঞ্চ, ডেস্ক ও টেবিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের ৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হচ্ছে বিয়ানীবাজার। এই উপজেলার ৯টি স্কুলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর বিদ্যালয়গুলোর ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধার নিম্ন ও চরাঞ্চলের ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গতদের আশ্রয়ের কারণে ৩৫টি এখনো বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়িতে পানি ওঠায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জের ২৩টি স্কুল বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় মেঝে, পলেস্তারাসহ ফার্নিচার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে সদর উপজেলার কামারজানি কলমু এসএফসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ৪০০ শিশুর লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার দেড় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ বলছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বন্যাকবলিত স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছে, প্রতিবছরই বন্যার সময় পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়। এতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে থাকায় আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জামালপুরে ৩১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসলামপুরের ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। জামালপুর জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৩০টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৫০টি, কলেজ আটটি এবং মাদরাসা রয়েছে ২৮টি।

সিরাজগঞ্জের ২৮৬টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত এক মাসে বিলীন হয়েছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। কাজিপুরে দুটি ও শাহজাদপুরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আরো পাঁচ-সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে অন্যের বাড়ি বা খোলা স্থানে ঘর তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর যেসব স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তা পুনরায় নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

মৌলভীবাজারে ১৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১টি ও উচ্চ মাধ্যমিক চারটি। বর্তমানে ৩৩টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা থাকায় ১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফ্লোর দেবে গেছে, ভবনের রং নষ্ট হয়েছে। দরজা-জানালা পচে গেছে, নষ্ট হয়েছে বেঞ্চ, ডেস্ক। টয়লেট, সেপটিক ট্যাংক ও ভবন ডাম্প হওয়া। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আলিম জানান, ক্ষতির নিরূপণ করা হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

কুড়িগ্রামে ১২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্কুলে এখনো ক্লাস শুরু করা যায়নি। যেসব স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেখানে ছাত্র উপস্থিতি ৫০ শতাংশেরও কম। বন্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারছে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলায় ১৯৩টি স্কুল নিমজ্জিত হয়। এর মধ্যে ১২৯টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। নদীভাঙনের শিকার হয়েছে পাঁচটি স্কুল, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরো ১৮টি স্কুল। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নে পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ও মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো ২২টিতে বন্যার পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চারটি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভূঞাপুর উপজেলার চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে বন্যার পানি উঠে মেঝে ও মাঠের মাটি স্রোতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি, কালিহাতী উপজেলার দুটি ও ভূঞাপুর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শেরপুরে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কামারেরচর ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। বিদ্যালয়ের চারপাশে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। কামারেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ১০টার পরিবর্তে ১১টায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাটে ১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে। অন্য দুটি বিদ্যালয়ের একটি করে টিনের ঘর চলে গেছে নদীতে। এতে অন্তত ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি হলেও বিকল্প উপায়ে পাঠদান চালু রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026140213012695