বন্যায় বিপদে ৮১ লাখ শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চরাঞ্চলের বাতিঘর নামে পরিচিত মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা এলাকার এসইএস ডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়েছে এক সপ্তাহও হয়নি। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ে যখন পাঠদান শুরু হয়, তখন পদ্মা নদীর সীমানা ছিল প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই বিদ্যালয়ে ২৪টি গ্রামের প্রায় ৩০০ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করত। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ইফতেখার মাহমুদ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই শিক্ষার্থীদের এখন কী হবে, জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. আফজাল হোসেন বলেন, নদী থেকে চার কিলোমিটার দূরে নতুন একটি জায়গা ঠিক করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় একজন দানবীর জমি দিতে চেয়েছেন। ওই জমিতে বিদ্যালয় ভবন করে দিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে।

কিন্তু ভবনটি নির্মাণের সময় তো নদী থেকে চার কিলোমিটার দূরে ছিল, এই প্রশ্নে আফজাল হোসেন বলেন, এখানে জমির দাম অনেক। এত বড় স্কুলের জন্য কে এত বড় জমি দেবে?

এর আগে গত বছরও বন্দরখোলা এলাকার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়েছিল। শুধু পদ্মা নয়, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা থেকে শুরু করে যমুনা অববাহিকায় বন্যার পানি ও ভাঙনে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে দেশের ৩০ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, পেনসিল, কলমও ভেসে গেছে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমনিতেই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখন শিক্ষা অবকাঠামো ও উপকরণও হুমকির মুখে পড়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো যৌথভাবে দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯০২টি বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮১ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। আর বই, খাতা, কলম, পেনসিলসহ শিক্ষা উপকরণ ভেসে গেছে ১০ লাখ শিক্ষার্থীর। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগে, ৭৬২টি। এরপর সিলেট বিভাগে ৬৩৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

প্রতিবেদন বলছে, করোনার কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুব একটা হয়নি। বন্যার সময়ে ভবনগুলো রক্ষার জন্য বরাদ্দও ছিল সীমিত। আবার শিক্ষার্থীদেরকেও এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী দুটি বড় স্কুল ভবন পুরোপুরি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এসব ভবনকে দ্রুত কীভাবে মেরামত ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সরকারিভাবে ভাঙনের পূর্বাভাস এবং ভাঙনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে দেয়ার পরও নদীর কাছাকাছি কেন এত বড় ভবন করা হয়, এই প্রশ্নে আকরাম–আল–হোসেন বলেন, নদীতীর ও চর এলাকাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। তা না হলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা কোথায় পড়বে। নদীর চার কিলোমিটার দূরে ভবন নির্মাণ করার পরও রক্ষা পেল না। তবে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আর প্রথাগত উপায়ে ভবন নির্মাণ করা হবে না। ভাঙন ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় কী ধরনের ভবন টেকসই হবে, তার দুটি নকশা নিয়ে কাজ চলছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৩টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন। বন্যায় এ পর্যন্ত ৩১টি জেলায় ৪৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপকরণ ভেসে গেছে বা নষ্ট হয়েছে, তাদের সহায়তা দিতে হবে। যাতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একই সঙ্গে তাদের উপবৃত্তির টাকা বাড়িয়ে দেওয়া যায় কি না, সেটি ভাবতে হবে। এমনকি উপবৃত্তির টাকা অগ্রিম দেওয়া যায় কি না, সেটিও ভাবতে হবে। 

পানি নামতে আগস্টের মাঝামাঝি লেগে যাবে

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের প্রধান দুই অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মায় বন্যার পানি নামতে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেগে যাবে। আগামী দু–এক দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার উজানে বৃষ্টি বেড়ে আরেক দফা বন্যার ঢল আসতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032689571380615