বন্যায় বড় ক্ষতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। মাধ্যমিকে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

এবারের বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। শুধু বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যা সারা দেশের কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ক্ষত রেখে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও এখনো পানি নামেনি।

বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, গত ২৯ ও ৩০ জুলাই দুটি ভবন এবং ৪০ শতাংশ জমিসহ পুরো বিদ্যালয়ই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয় স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এখানে ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের অনেকের পরিবারের বাড়িঘরও নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। তারা এখন রাস্তায় অস্থায়ী ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

অন্যদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণের কাজ চলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ২০০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রকৃত তথ্য কিছুটা হেরফের হতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিদ্যালয়গুলো খুললেও সেগুলোতে শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

এবারের বন্যা তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় পানি নামেনি। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে ১ হাজার ৪৬০টি বিদ্যালয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৭৬১টি, সিলেটে ৫৮২টি, রংপুরে ৬৬৪টি, ময়মনসিংহে ৩৮৮টি, চট্টগ্রামে ৫২টি, বরিশালে ৫টি এবং খুলনায় ১টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ২১টি বিদ্যালয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতির তালিকায় আছে ঢাকা বিভাগের ১৩টি, রাজশাহীর ১৩টি, ময়মনসিংহের ৩টি, চট্টগ্রামের ৪টি, সিলেটের ৪টি এবং বরিশাল বিভাগের ১টি বিদ্যালয়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও অনেকের বাড়িঘর বন্যার কবলে পড়ে শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হয়েছে। শরীয়তপুরের বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সংগীতা। সে মুঠোফোনে জানাল, তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় তার বইখাতাও নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংগীতার মা রেনু বেগম বললেন, তাঁর মেয়ে কীভাবে পড়বে, তা নিয়ে সে এখন কান্নাকাটি করে।

ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা দেখভালকারী সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা জেনেছেন। বন্যার পানি নামলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়ার পর সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ জন্য প্রকল্পের অধীন আলাদা তহবিলও রাখা হয়েছে। হয়তো কোথাও ক্ষুদ্র আবার কোথাও বৃহৎ সংস্কারের প্রয়োজন হবে। যদি এই তহবিলের টাকায় সম্ভব না হয়, তাহলে রাজস্ব খাত থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগুলো নির্ভর করছে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব পাওয়ার ওপর।

বন্যাদুর্গত এলাকার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য। পাশাপাশি বন্যার কবলেও পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে মাউশি। মাউশির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাউশির ময়মনসিংহ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলেও ২০০-র কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর অঞ্চলে প্রায় দেড় শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাউশির আঞ্চলিক কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে টাকার পরিমাণে কী রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারও তথ্য দিয়েছেন। এখন এগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করার পর সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্যগুলো পাঠানো হবে। সেই ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : প্রথমআলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026800632476807