কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের সোনাতলা, চরসোনাতলা, চল্লিশপাড়া, সৌদিপাড়া. ঠাকুরপাড়া, চরপাড়া, ইনসাফনগর, চিলমারী, চরচিলমারী, মানিকেরচর, বাংলাবাজার, চরবাহিরমাদী, বাহিরমাদী, ভবনন্দদিয়াড়, আতারপাড়াসহ ৩৭ গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় দুটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদরাসা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আকস্মিক পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ের ঘর-বাড়িসহ চলাচলের সব রাস্তা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী পদ্মার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করেছে। তবে কয়েক দিন আগের তুলনায় পানি বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক রয়েছে। বোর্ডের ধারণা, দু এক দিনের মধ্যে পানি কমতে থাকবে।
গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ভারতের ফারাক্কা হয়ে পদ্মায় পড়ছে পানি। তবে গত দুদিন পানি বৃদ্ধির পরিমান কিছুটা কমেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ০ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। দুদিন আগেও পানি বৃদ্ধির পরিমান ছিল প্রায় ০ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার। আজ সকালে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হল ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ০ দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সোনাতলা এলাকার জয়তুন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, সে দুদিন ধরে প্রায় না খাওয়া অবস্থায় রয়েছে। একই অভিযোগ চরসোনাতলা এলাকার জমির উদ্দিন নামে পানিবন্দী এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, ঘরের মধ্যে হাটুপানি। পরিবারের লোকজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সেইসাথে পোকা মাকড়ের ভয় ও আতংকও রয়েছে। তবে অভিযোগ করেন সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ২ হাজারেরও বেশি বাড়ি ও ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি জানান, অর্থকরী ফসল মাসকলাই ডুবে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও পানিবন্দী মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা চান।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সাংসদ এ্যাড. সারওয়ার জাহান বাদশা বলেন, পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও তিনি চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সেখানে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানান। পানিবন্দী হয়ে মানুষ যেন দুর্ভোগে না পড়েন সেজন্য বন্যা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেন।