টানা ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানিতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে আশার বাণী শুনিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসলাম বলেন, যদি বর্ষণ না হয় তবে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি জানান, এই মুহূর্তে দেশের ১১ জেলা বন্যা প্লাবিত আছে। বন্যায় সিভিয়ার অবস্থায় রয়েছে ফেনী। এ ছাড়া নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্তমানে বন্যা প্লাবিত আছে।
কামরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব জেলায় সর্বমোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও ২০ হাজার ১৫০ টন চাল এবং ১৫ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, রোভার স্কাউট এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয়রা কাজ করছে। সবাইকে নিয়ে বন্যা মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কন্ট্রোলরুম থেকে প্রতিটি জেলার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, এ পর্যন্ত আহতের তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে ১৩ জন নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, নোয়াখালী ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বন্যায় ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ১১টি জেলায় ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাওয়া খবর থেকে জানা গেছে, সব মিলিয়ে এখন দেশের ১৩ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি ও সিলেট।
জানা গেছে, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর মানুষ। জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি আর কোথাও কোথাও একতলা পর্যন্ত ডুবে গেছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্রও প্রায় একই।
নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের একাধিক এলাকা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ঝালকাঠির বিষখালী নদী বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সুরমা-মেঘনায় ৭১ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা-মেঘনায় ৮৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলার বিষখালী নদী ১১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলায় ১০ সেন্টিমিটার, উমেদপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার সমান্তরাল, ভোলা খেয়াঘাট তেঁতুলিয়া নদী ৩ সেন্টিমিটার ও বরগুনার আমতলী উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।