ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে ভুল পথে পরিচালনার জন্য শিক্ষকতার চাকরিটা শেষ তক হারিয়েই ফেললেন ববিতা সরকার। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এই প্রার্থী শিক্ষিকা হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি খেয়ে। আদালত এবার তাকে বরখাস্ত করে সেই চাকরিটি দিয়েছে অনামিকা রায় নামে আর এক প্রার্থীকে। শুধু তাই নয়, কয়েক কিস্তিতে অঙ্কিতার কাছ থেকে নেয়া ববিতাকে ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা আগামী ৬ জুনের মধ্যে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি অবৈধভাবে স্কুল শিক্ষক হওয়া ৩৬ হাজার প্রার্থীর চাকরি বাতিলকারী বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মূলত অবৈধভাবে বাগানো শিক্ষকতার চাকরির বেতন বাবদ অঙ্কিতার নেয়া টাকাই দেয়া হয়েছিলো ববিতাকে। সেই টাকাই এখন আদালতের মাধ্যমে নতুন নিয়োগ পাওয়া অনামিকাকে দেয়া হবে।
রায়ের পর টাকা ফেরত দিতে সময় চান ববিতা। তিনি বলেন, এক বছর চাকরি করার পর চাকরি কেড়ে নেওয়া কাম্য নয়। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছি। টাকা ফেরত দিতে তিন মাস সময় দেওয়া হোক আমাকে।
তার আবেদন শুনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আপনি আদালতকে যেভাবে ভুল তথ্য দিয়ে পরিচালনা করেছেন আমি চাইলে কড়া পদক্ষেপ করতে পারতাম। এই ক’দিনে আপনি যা বেতন পেয়েছেন তা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না। এইটুকু সান্তনা নিয়ে হাই কোর্ট থেকে যান। যা হয়েছে তা আপনার ভুলের জন্য।
এর আগে পরেশ-কন্যা অঙ্কিতাকে বেআইনিভাবে শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন ববিতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, এসএসসির মেধাতালিকায় অনেক পেছনে থাকা অঙ্কিতার নাম প্রথমে নিয়ে আসায় তিনি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এর পর অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে ‘যোগ্য’ প্রার্থী হিসাবে ববিতাকে সেই চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অঙ্কিতার এত দিনের চাকরির সব বেতনও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ববিতাকে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ববিতার নিয়োগও। ববিতার চাকরি বাতিলের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরই শহরের এসএসসি পরীক্ষার্থী অনামিকা। অনামিকার অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতা স্নাতক স্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গেছে। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির নির্দেশে সেই চাকরি পেলেন অনামিকা।
সূত্র: আনন্দবাজার