বরিশাল গার্লস স্কুলে ৬৭ বছরেও নেই শহিদ মিনার

সাইফুর রহমান মিরণ |

ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার। বরিশালের খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও নেই কোনো শহিদ মিনার। ফলে ৫২’র অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নিজ ক্যাম্পাসে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে একাধিকবার। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবেই এখানে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠার কথা। এ বছর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বছরের আগেই শহিদ মিনার নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান শিক্ষক।

৫২’র ভাষা আন্দোলনে বরিশালের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে বরিশালে গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম কমিটি। ওই কমিটি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে লাল কাপড়ে প্রথম শহিদ মিনারও নির্মাণ করা হয়। যদিও পরে পুলিশ ওই শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে।

এরপর থেকে বরিশালের বিভিন্ন অলিগলিতে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিকে কলাগাছ দিয়ে তৈরি হতো অস্থায়ী শহিদ মিনার। পরে অবশ্য স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। 
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর অতিক্রম হলেও বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এখনও শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।

৭১’এর উত্তাল দিনে বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকে বিদ্যালয়টি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। পরে অবশ্য মেহেরপুরের বৈদ্যনাথপুর আম্রকাননে সচিবালয় স্থাপন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

নারী নেত্রী ও সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা অভিযোগ করেন, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহিদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। এটা যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে প্রধান শিক্ষক এবং প্রশাসনেরও উদাসীনতা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সচিবালয় হিসেবে পরিচিত সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার থাকবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এক সময় অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে সেই উদ্যোগও নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ এর আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছে শুনেছি। এ বছর আমাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আমরা দ্রুত একটি প্রকল্প গ্রহণ করবো। যাতে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা হয়।

বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ে অবশ্যই শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত। বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনিক জটিলতায় এখন পর্যন্ত নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। আশাকরি, স্বল্প সময়ের মধ্যে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035710334777832