বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুলের শাস্তি বহাল

সাইফুর রহমান মিরণ, বরিশাল |

নৈতিক স্খলন, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য পুনরায় সিন্ডিকেটসভা থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত না মানলে তাকে বরখাস্ত করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে ১৭ নভেম্বর ২০১৮ সিন্ডিকেটের ৫৯তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে মনিরুলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভা থেকে মনিরুল ইসলামকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই সভা মনিরুল ইসলামের পরিবর্তে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. মো. হাসিনুর রহমানকে। ১৯ ডিসেম্বর এ মর্মে হাসিনুর রহমানকে একটি চিঠিও দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ। 

গত ১৬ জানুয়ারি দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয় অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে। চিঠিতে মনিরুল ইসলামকে নৈতিক স্খলনের দায়ে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তা না হলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

এ চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। গত ২৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির আদেশ স্থগিতের একটি আদেশ নিয়ে মনিরুল ইসলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওইদিন দুপুরে কাজে যোগ দিতে মনিরুল ইসলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। কিন্তু উপাচার্য এসএম ইমামুল হক তার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম ইমামুল হক দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নৈতিক স্থখলনজনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য গত নভেম্বরের সিন্ডিকেটসভা থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। উল্টো সিন্ডিকেটসভার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার একটি আদেশ পেয়েছেন শুনেছি। সেই কাগজ নিয়ে যোগাদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া তাকে যোগদান করানো সম্ভব ছিল না। এর প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভা থেকে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেয়া ৫৯তম সভার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মনিরুলের পক্ষে দেয়া আদেশ (ভ্যাকেট) বাতিল করার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. মনিরুল ইসলাম ঢাকার বেসরকারি (নন-এমপিওভুক্ত) একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কেমব্রিয়ান কলেজে) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্বে ছিলেন। তার স্ত্রী মাসুদা বেগম ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালীন সময় সাবেক এক শিক্ষা মন্ত্রীর মাধ্যমে মনিরুলকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দেন।  নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে দুই বছর ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর রেজিস্ট্রার হওয়ার কথা। কিন্তু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং তার স্ত্রীর পরিচিতির সূত্রধরে প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আগেই রেজিস্ট্রার হন মনিরুল ইসলাম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েরবি রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে মনিরুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। নৈতিক স্খলন সংক্রান্ত অশালীন ভিডিও প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক)। এ সব কারণে জ্যেষ্ঠ অনেক শিক্ষকসহ বিশ্বিবিদ্যালয় কতৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। তখন মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা নৈতিক স্খলনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভা তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের নির্দেশ দেয়। এরপরই মনিরুল ইসলাম ছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানান, অভিযুক্ত মনিরুলকে স্বপদে ফেরত নিতে তার স্ত্রী দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রত্যাশী এক তরুণীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও প্রমাণসহ রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিচারের দাবিতে ভিসির কাছে লিখিত আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিসি সিন্ডিকেটের ৩ সদস্যের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে নৈতিক স্খলনের দায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন।

আরও পড়ুন: ববি রেজিস্ট্রারের নৈতিক স্খলন, কাজে যোগদানের ব্যর্থ চেষ্টা

                  ভিডিও কলে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রীর কাছে যৌন আবেদন

                  ঢাকা বোর্ডের মাসুদার `দুর্নীতি’ তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ

                  `মাসুদার স্বামী আবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে!’

                  যৌন হয়রানি: শিক্ষা ক্যাডার সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ

                  নৈতিক স্খলন নিয়ে যা বললেন ববি রেজিস্ট্রার


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ - dainik shiksha কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে - dainik shiksha শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় - dainik shiksha বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন - dainik shiksha প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! - dainik shiksha ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে - dainik shiksha সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029449462890625