বরিশাল বোর্ডে ফল জালিয়াতি : কর্তাদের বাঁচাতে গোবিন্দ পলাতক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গোবিন্দ চন্দ্র পাল। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ‘আর্মড গার্ড’ পদে যোগ দেন। শিক্ষা বোর্ডের চাকরিবিধিতে ওই পদের নেই কোনো পদোন্নতি। এর পরও অদৃশ্য কারণে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বিধি ভেঙে তাঁকে রেকর্ডরুমের দায়িত্ব দেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পরে ‘নিম্নমান সহকারী’ পদে পদোন্নতি, এরপর ‘উচ্চমান সহকারী’ পদ বাগিয়ে দায়িত্ব পান রেকর্ড সাপ্লায়ারের। দেড় যুগ ধরে পরীক্ষাসংক্রান্ত সব কাজ বিশ্বস্ততার সঙ্গেই করছিলেন গোবিন্দ। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আজিম হোসেন।

তবে গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির ফলে উচ্চতর গণিত বিষয়ে ১৮ শিক্ষার্থীর গোঁজামিল ধরা পড়ে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ রেকর্ড সাপ্লায়ার গোবিন্দ চন্দ্র পালকে এ ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত করে। প্রথমে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত, পরে তাঁর নামে ফৌজদারি মামলা করা হয়। এ অভিযোগ মাথায় নিয়ে গোবিন্দ চন্দ্র এখন ফেরারি। তাঁকে কেউই খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি পুলিশও না।

পুলিশ ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, মামলা হওয়ার পর অপরাধের দায় এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন গোবিন্দ।

তবে প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলা হওয়ার পরই গোবিন্দ ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। আর এর খরচ জুগিয়েছেন পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তারা, যাতে তাঁদের নাম সামনে চলে না আসে।

এদিকে গোবিন্দের সাক্ষ্য ছাড়াই আগামীকাল সোমবার উচ্চতর গণিতের ফল জালিয়াতির ঘটনায় শিক্ষা বোর্ডের করা তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। গোবিন্দের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় কিছুটা অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন হলেও এ জালিয়াতিতে গোবিন্দের সম্পৃক্ততা উঠে আসবে বলে মনে করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

শিক্ষা বোর্ডের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রধান অভিযুক্ত গোবিন্দকে না পাওয়ায় গত ২৯ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দিতে ১০ দিনের সময় চেয়েছিলাম। সোমবার এর শেষ দিন। ওই দিনই প্রতিবেদন জমা দেব। তবে তদন্ত চলাকালীন গোবিন্দের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। তার স্ত্রীর নামে নোটিশ করেছিলাম। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।’ তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত সোমবারই বলা হবে। তবে গোবিন্দের একার পক্ষে এ জালিয়াতি করা সম্ভব নয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, পুরো রেকর্ডরুমের দায়িত্বে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন। পরীক্ষার উত্তরপত্র যে সংরক্ষিত স্থানে থাকে, সেটির দায়িত্বেও তিনি। আর উত্তরপত্র সঠিকভাবে আছে কি না, কে কতগুলো পাবে, উত্তরপত্র কেউ সরাল কি না অথবা জালিয়াতি হলো কি না, তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন সেকশন অফিসার শহিদুল ইসলাম। তাঁকে ফাঁকি দিয়ে কোনো খাতা কিংবা উত্তরপত্র সরানোর ক্ষমতা কারোর নেই। এর বাইরেও শিক্ষা বোর্ড শ্রমিক দলের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলামের অধীন পরীক্ষা শাখার যে ছয়জন কর্মচারী রয়েছেন, এর মধ্যে গোবিন্দ বাদে অন্য সবাই তাঁর সংগঠনের। এর মধ্যে রয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম (ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার), আহসানুল কবির (ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার), ইফসুফ হোসেন (উচ্চমান সহকারী), মিজানুর রহমান (উচ্চমান সহকারী) ও মনিরুল ইসলাম (অফিস সহায়ক)। এঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোবিন্দের একার পক্ষে কোনোভাবেই এ কাজ করা সম্ভব নয়। এর পরও পরীক্ষা শাখার কাউকেই কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়নি।

গোবিন্দসহ ১৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা বোর্ডের ফৌজদারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও এয়ারপোর্ট থানার উপপরিদর্শক আকতার হোসেন বলেন, ‘সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা গোবিন্দকে খুঁজছি। কিন্তু তার খোঁজ না পাওয়ায় ধারণা করছি যে সে দেশত্যাগের চেষ্টা করতে পারে। তার স্ত্রীর সঙ্গে এর আগে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সম্প্রতি তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গত শুক্রবার দেশের সব বিমানবন্দর, থানা ও বর্ডার এলাকায় গোবিন্দের সরকারি পাসপোর্টের কপি পাঠানো হয়েছে, যাতে সে দেশ ত্যাগ করতে না পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মামলা হওয়ার পরপরই গোবিন্দের পাসপোর্ট কপি বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছি। তারা দিতে দেরি করায় আমাদের অ্যালার্ট জারি করতে বিলম্ব হয়েছে।’

শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর গোবিন্দ এক দিন অফিসে এসেছিল। খাতায় সই করেই সে অফিস ছাড়ে। এরপর পরীক্ষা শাখার দুই কর্মকর্তা (সেকশন অফিসার) তার সঙ্গে অফিস চত্বর থেকে একটু দূরে দেখা করেন। তখন তাকে দেশ ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। পরে তার নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারি, সে গত ২৮ আগস্ট ভারতে চলে গেছে। আর তার ভারতে যাওয়ার খরচ বহন করেছেন ওই কর্মকর্তারা।’

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস বলেন, এইচএসসির উচ্চতর গণিত পরীক্ষায় ওই ১৮ শিক্ষার্থীর খাতা জালিয়াতির ঘটনা জানার পর তাদের ফল স্থগিত করা হয়। পরে গত ৪ ও ৫ আগস্ট ওই শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ওই সময় এক শিক্ষার্থী জানায়, গোবিন্দ এ ঘটনায় জড়িত। এরপর ৮ আগস্ট গোবিন্দকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ১৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান করে গঠন করা হয় তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি। গত ২৬ আগস্ট এয়ারপোর্ট থানায় গোবিন্দসহ অভিযুক্ত ১৮ শিক্ষার্থীকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01490306854248