বলাৎকারের অভিযোগ: আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসা অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এক শিশুকে বলাৎকার করার অভিযোগে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ ওরফে আহসান সাইয়েদের বাসা অবরোধ করেছিল এলাকাবাসী। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত সপরিবারে এলাকা ছাড়ার শর্তে উদ্ধার পান ভিসি। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ‘এ’ ব্লকের ২ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। একই সড়কের একটি ছয়তলা ভবনের তিনতলায় ভিসির পারিবারিক বাসা। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঢাকায়। তবে ভিসি সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগে চট্টগ্রামের বাসায় যেতেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভিসির বিরুদ্ধে আগেও মহল্লার কিছু শিশু নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে হাতেনাতে ধরার অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবকরা। গত শনিবার সন্ধ্যায় এক শিশুকে গলি থেকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে বলাৎকারের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় কয়েকজন গিয়ে ভিসিকে ঘেরাও করে ফেলেন। এলাকাবাসী খবর পেয়ে বাসভবনই ঘেরাও করে ফেলে। ভিসি শিশু বলাৎকারের কথা স্বীকার করেন এবং সপরিবারে এলাকা ছেড়ে দিতে রাজি হন। এরপর রাত ২টার দিকে লোকজন অবরোধ তুলে নিলে ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, পুলিশ তাদের ভ্যানে করে ভিসিকে নিয়ে যায়।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ ওরফে আহসান সাইয়েদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে দেশের প্রথম সরকারি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনি এর উপাচার্য নিযুক্ত হন। চার বছর ধরে তাঁর পরিবার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ওই বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে আছে। তিনি ঢাকার কাজের ফাঁকে এখানেই নিয়মিত বসবাস করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রামপুর।

গতকাল সন্ধ্যায় ভিসি অভিযোগ শুনে বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীর চাপের মুখে বলাৎকারের কথা স্বীকার করেছি। আমি কখনো এ ধরনের অপকর্ম করিনি।’ তাঁকে এলাকা ছাড়া করতে মহল্লার লোকজন মিথ্যা অভিযোগ এনেছে বলেও ভিসি দাবি করেন। তবে কেন এলাকাবাসী ষড়যন্ত্র করবে—ভিসি এর যুক্তিসংগত কারণ দেখাননি।

এলাকাবাসী বলছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার রাত ২টার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে আহসান সাইয়েদকে তাঁর বাসভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এসআই সঞ্জয়ের নেতৃত্বে ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। অবরোধকারীদের মুখে বিবরণ শুনে তা লিপিবদ্ধ করেন কনস্টেবল আব্দুল কুদ্দুস।

বাড়ির মালিক আবুল হোসেন বলেছেন, ‘রাত ১০টার দিকে পাড়ার লোকজন জড়ো হয়ে বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে আমরা সবাই তাঁর বাসায় গিয়ে তা জানতে চাই। একপর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চান। তখন আমরা চান্দগাঁও থানার পুলিশকে খবর দিই।’ বাড়িওয়ালা আরো বলেন, ড. আহসান সাইয়েদ আর এখানে না থাকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। তাঁর পরিবারও এক দিনের মধ্যে অন্য জায়গায় চলে যেতে রাজি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাফায়েত উল হক জাবেদ অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ চললেও লোকলজ্জার ভয়ে অভিভাবকরা তা প্রকাশ করেনি। আবার বিষয়টি প্রমাণও করা যাচ্ছিল না। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এক শিশুকে পাশের একটি ভবনের গ্যারেজে যৌন নির্যাতন চালানোর সময় বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন এলাকার লোকজন জমায়েত হয়ে তাঁর বাসা ঘেরাও করে। বাড়ির মালিককেও বিষয়টি জানানো হয়। এলাকাবাসীর চাপের মুখে ভিসি বিষয়টি স্বীকার করেন বলে জানান জাবেদ।

পুলিশের গাড়িতে করে আহসান সাইয়েদকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা এলাকাবাসী বললেও চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আবুল বাশার একটু ভিন্ন ভাষ্য দিচ্ছেন। তিনি  বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনেছে এবং তাদের শান্ত করতে সক্ষম হয়। তবে অভিযুক্ত ভিসি সাহেবকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।’

সূত্র: কালের কন্ঠ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026671886444092