সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কারের প্রতিবাদে সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে প্রতীকী ক্লাস নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ।
বুধবার বিকেলে শহীদ মিনারে এই ক্লাসের আয়োজন করে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্বদ্যিালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
রাজন দাশসহ ক্লাসে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সম্প্রতি লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপক জেরিনা হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাশকে নিয়মবর্হিভূতভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। এই বহিস্কারের প্রতিবাদে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে বুধবার প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হয়।
বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনারের পাশের মঞ্চে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন রাজন দাশ। মঞ্চের দেয়ালে রাজন দাশের ছবিসহ ‘প্রতীকী ক্লাস’ লেখা একটি ব্যানার টানানো রয়েছে। এছাড়া একটি ওয়াইটবোর্ড রয়েছে সেখানে।
ক্লাসে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী অনিক কর্মকার বলেন, ‘রাজন স্যারকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তাই আমরা শহীদ মিনারে এই ক্লাসের আয়োজন করেছি। আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাতে চাই আমরা রাজন স্যারকে আমাদের মাঝে ক্লাসে চাই।’
নুসরাত জাহান মিতু নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাজন স্যার ও জেরিনা ম্যাডামের অবৈধ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা লাগাতার আন্দোলন করছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, উপাচার্য দেশে আসলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু আমরা একদিনের জন্যও রাজন স্যারের ক্লাস মিস করতে চাই না তাই এই আয়োজন করেছি।’
এর আগে দুই শিক্ষককে বরখাস্তের প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে ‘সম্মিলিত নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়। আর রোববার সকালে দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার এলাকার ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিল্পপতি রাগীব আলীর মালিকানাধীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কদিন ধরেই নানা অস্থিরতা চলছে। কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলার সঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ডের বিরোধ চলছে এবং এ বিরোধের জেরে দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।
বহিস্কৃত দুই শিক্ষক উপাচার্যের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন। এ অবস্থায় ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে গত ১২ অক্টোবর স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ এবং শিক্ষক স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করেন। নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে জেরিনা হোসেন ও স্থপতি রাজন দাশ দেশজুড়েই পরিচিত। ফলে তাদের এ বহিস্কারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীসহ তাদের শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে রাজন দাশ বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আজকে শহীদ মিনারেই প্রতীকী ক্লাস নিচ্ছি আমি।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপাচার্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা অবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী এভাবে কাউকে বহিস্কার করা যায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশে কাউকে নিয়োগ বা বরখাস্ত করা যায় না দাবি করে রাজন দাশ বলেন, ‘এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। গত আট মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। ভুয়া অভিযোগে গত ১১ অক্টোবর আমাকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব দেয়ার জন্য আমি ১০ দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মাত্র তিনদিন সময় দেয়া হয়। শোকজের কাগজ ৯ তারিখে স্বাক্ষরিত হলেও আমি ইমেইল পাই ১১ তারিখ। এর একদিন পরই (১২ অক্টোবর) আরেক মেইলে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বরখাস্ত আদেশ পাঠানো হয়।’