বাঁশের বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ দখলের অভিযোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

নাতিকে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই বাঁশের বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠের একটি অংশ দখল করেছেন এক ব্যক্তি। ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার। বিদ্যালয়ের মাঠে বেড়া দেওয়ায় দৈনিক সমাবেশসহ খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি। এতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর উচ্চ বিদ্যালয় ও মানিকপীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ একটিই। মাঠের পশ্চিমে প্রাথমিক আর পূর্বে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গত সোমবার পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান মাঠের পূর্বাংশজুড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া। পতাকা স্ট্যান্ডটি বেড়ার ভেতরে হওয়ায় সমাবেশে জাতীয় সংগীত গাওয়া আর জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানো হলো না তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে নাতি নিশাতকে নিয়োগ দিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মত না হওয়ায় গত ৮ আগস্ট মাঠের ১৩ শতাংশ জমি বাঁশের বেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছেন ওই এলাকার দবির উদ্দিন; এমনকি গত ৪ আগস্ট আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলাও করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, পাঁচ লাখ টাকা নিয়েও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম তাঁর নাতিকে নিয়োগ দেননি। এর বদলে বেশি টাকা নিয়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগের চেষ্টা করছেন, এমনকি এখন টাকা নেওয়ার কথাও অস্বীকার করছেন তাঁরা। তাই এই পন্থা বেছে নিয়েছেন তিনি, এমনকি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন লিখিত অভিযোগও।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ফারজিনা আক্তার বলে, ‘আমরা প্রতিদিন সমাবেশ করে জাতীয় সংগীত গাই। কিন্তু মাঠে বেড়া দেওয়ার পর থেকে সমাবেশ করতে পারছি না। একই সঙ্গে খেলাধুলাও করতে পারছি না। ’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই মাঠে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক—দুই প্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে। বহু পুরনো এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির মাঠের জমি এখন নিজেদের বলে দাবি করছেন দবির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে হুমায়ুন কবির। ’

মানিকপীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাব্যচন্দ্র রায় বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধ যতই থাকুক না কেন, বিদ্যালয় মাঠে এভাবে বেড়া দিতে পারেন না। ’

মানিকপীরের বনগ্রাম শিকারপুর এলাকার দবির উদ্দিন বলেন, ‘এই বিদ্যালয় দুটির জন্য আমরাই জমি দিয়েছি। আমাদের ১৩ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের দখলে ছিল। আমরা বারবার জমির বিষয়টি সমাধান করে নেওয়ার অনুরোধ করছিলাম, কিন্তু তাঁরা কথা শোনেননি। তাই এখন নিজেদের জমিতে আমরা বেড়া দিয়েছি। ’

দবির উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ’

মানিকপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এখনো নিয়োগের পরীক্ষাই হয়নি। তাঁরা টাকা দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করছেন। জমি নিয়ে তাঁরা আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেছেন, কিন্তু মামলার রায় আসার আগেই তাঁরা মাঠে বেড়া দিয়ে দখল করলেন কেন? তবে আদালতের রায়ে তাঁরা জমি পেলে আমরা ছেড়ে দেব। আমরা বিষয়টি মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগও দেব। বিদ্যালয়ের মাঠ দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি। ’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, ‘জমিসংক্রান্ত বিষয়ে ভালো করে কাগজপত্র না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064449310302734