বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের গোলাগুলি নিরাপত্তার জন্য হুমকি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মিয়ানমারের আগ্রাসী আচরণের নতুন মাত্রা বিশ্ব দেখছে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র আরাকান আর্মির মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষ নতুন নয়। তবে গত কয়েক সপ্তাহে তাদের মধ্যকার সংঘর্ষ নতুন মোড় নিয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন, মংডু ও সিত্তওয়েসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। আরাকান আর্মির উপর্যুপরি আক্রমণে জান্তা বাহিনী অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় পড়েছে। জান্তা বাহিনী ভাবেনি যুদ্ধ এতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে এবং আরাকান আর্মির কাছে তারা সামরিকভাবে পর্যুদস্ত হবে। তাই এখন তারা পরাজিত পক্ষের মতো আচরণ করছে। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়,মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৫০০ জান্তা রিইনফোর্সমেন্ট সৈন্য পাঠানোর পরও ১৫ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মি উত্তর রাখাইন রাজ্যের মংডুতে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে নেয়। মি তাইক নামের এই সামরিক ঘাঁটিটি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের ৩৭নং পিলারের কাছে অবস্থিত। ঘাঁটিটি রক্ষায় বিমান ও আর্টিলারি বাহিনীর সহায়তা নিলেও জান্তা বাহিনী সেটি দখলে রাখতে পারেনি। উল্লেখ্য, মি তাইক হলো গত দুই সপ্তাহে আরাকান আর্মি কর্তৃক দখলকৃত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মংডু অঞ্চলের তৃতীয় ঘাঁটি। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি প্রধান কৌশলগত সড়কের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে। এর ফলে জান্তা উত্তর রাখাইন রাজ্যে তাদের সৈন্য ও রসদ পরিবহণের জন্য এখন নৌপথ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থলপথের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জান্তা বাহিনী সিত্তওয়ে ও শোয়ে মিনগান নৌবন্দর দিয়ে জাহাজে সৈন্য ও রসদ সরবরাহ করছে। 

ইতঃপূর্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর তারা কিয়েন চাউং কৌশলগত ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩৭নং পিলারের কাছে উত্তর রাখাইন রাজ্যে আরও একটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারায়। এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি দাবি করে, এই ঘাঁটি দখলের সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন ল্যান্স কর্পোরাল বন্দি হয় এবং একজন পুলিশ লেফটেন্যান্টসহ আরও ১৯ জন জান্তা সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মিওয়া পাহাড় এবং তিনমা গ্রামসহ আশপাশের অঞ্চলে। সশস্ত্র আরাকান আর্মি এ অঞ্চলের তেমাওয়া ফাঁড়িও দখলে নিয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এতটাই যে, জান্তা সরকারের সামুদ্রিক প্রশাসন বিভাগ সিত্তওয়ে নৌবন্দর ও কালাদান নদীতে নৌকা ও ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আরাকান আর্মিকে মোকাবিলায় জান্তা বাহিনী অন্য অঞ্চলের সেনাঘাঁটি থেকে নতুন সৈন্য নিয়ে আসছে।

এই যুদ্ধের ভয়াবহতার চরম অবস্থার প্রমাণ হলো মর্টারের গোলার আঘাতে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু। এই মৃত্যুর ঘটনা মিয়ানমার জান্তার আগ্রাসী ও বেপরোয়া মনোভাবের চূড়ান্ত নিদর্শন। এ ঘটনায় আমরা মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আরাকান আর্মির যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা বারবার ঘটছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অপ্রতিবেশীসুলভ ও বেপরোয়া আচরণ চরমে পৌঁছেছে। জান্তা সেনাবাহিনীর স্থলসীমান্তের নিয়মকানুন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, বিমানবাহিনীর বাংলাদেশের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা ও মর্টার শেল নিক্ষেপ প্রমাণ করে জান্তা সরকারের অধীনে মিয়ানমারের আচরণ কতটা বেপরোয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এমন অযাচিত ও উসকানিমূলক আচরণ বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আঘাত। এর মাধ্যমে মিয়ানমার শুধু বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকিই সৃষ্টি করছে না; বরং এই আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। জান্তা সরকারের এরূপ উসকানিমূলক ও যুদ্ধংদেহি আচরণ এক ধরনের বর্বরতার নামান্তর। এছাড়াও এরূপ আচরণ একদিকে যেমন রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষতিসাধন করবে, অন্যদিকে এটি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তাই, আঞ্চলিক দেশগুলো, বৃহৎ শক্তিসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বেপরোয়া, আগ্রাসী আচরণ এখনই প্রতিহত না করতে পারলে দেশটি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক: ড. দেলোয়ার হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি - dainik shiksha নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056438446044922