বাকৃবিতে হল নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা দাবি প্রকৌশলীর

বাকৃবি প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শেখ রেহানা হল নির্মাণকাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশল শাখার পূর্ত নির্মাণ ও সংরক্ষণ বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. আল মামুনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বিল করিয়ে নেওয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে নিরুত্সাহিত করা, ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগ করেছেন শেখ রেহানা হলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী মো. আনোয়ার বিন আরাফাত। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী আল মামুন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে দুটি ছাত্রী হলের (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। হল দুটির জন্য আর্থিক বরাদ্দ ১০২ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে শেখ রেহানা হলের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। মাহবুব ব্রাদার্স অ্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড ও অনিক ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানি দুটি মিলিতভাবে শেখ রেহানা হল নির্মাণের কাজ করছে। তবে হল নির্মাণে নানা অভিযোগ তুলে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান শেখ রেহানা হলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী মো. আনোয়ার বিন আরাফাত।

মো. আনোয়ার বিন আরাফাতের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ‘প্রকৌশলী আল মামুন আমাদের কাজকে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ করে কাজে বাধার সৃষ্টি করেছেন। হল নির্মাণের নির্দেশ এবং আর্থিক বরাদ্দের হিসাব ২০১৪ সাল অনুযায়ী হলেও বর্তমাণকাজ চলছে ২০২২-এর উপাদান সামগ্রীর বাড়তি দরদাম অনুযায়ী। বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসান হলেও আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এমতাবস্থায় কাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন প্রকৌশলী আল মামুন। তিনি আমাদের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারের কাছে প্রতি সপ্তাহের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তার কথা না মানায় চলমান কাজের দরপত্রের কাগজ ২১ দিন তার টেবিলে ফেলে রাখেন। বাধ্য হয়ে বিল করার জন্য টাকা দিতে হয়েছে তাকে। এসব বিষয়ে আমি প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠাই।’

প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট পরিদর্শনকালে আর কোনো কাজ করবে না বলে কমিটিকে মৌখিকভাবে জানান আল মামুন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশলী আনোয়ার বিন আরাফাত তার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদ করলে তিনি বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে নিরুত্সাহিত করা, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা এবং ঢালাইকাজ শেষে বেঁচে যাওয়া এক বস্তা সিমেন্ট শুধু পানিতে মিশিয়ে ফেলে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায় । 

অভিযোগের ব্যাপারে প্রকৌশলী মো. আল মামুন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আনীত সব অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আলোচনাসভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপন করতে পারতেন। বরং আমি তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত। আমি সব বিষয় আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সমাধান করেছি। তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ ছবিসহ আমার কাছে আছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহীন ইসলাম খান বলেন, ‘যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে একে অপরের মতের অসামঞ্জস্য আসা স্বাভাবিক। ঠিকাদারের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আমাদের কাছে যে লিখিত অভিযোগপত্রটি দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশলী আল মামুনকে সতর্ক করা হয়েছে।’

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমার কাছে ঠিকাদারের সাইট ইঞ্জিনিয়ারের করা লিখিত অভিযোগের একটি অনুলিপি এসেছে। সেখানে প্রকৌশল শাখার প্রকৌশলীর টাকাপয়সা দাবি বা চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবেও আমাকে লেনদেনবিষয়ক কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানামতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৌশলী আল মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে লেনদেনজনিত কোনো অভিযোগ আমার কাছে এখনো পর্যন্ত আসেনি। আমার কাছে অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়ম বা দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর - dainik shiksha গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত - dainik shiksha সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025990009307861