বাচ্চার মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাচ্চারা সচরাচর হোমওয়ার্ক না করে কার্টুন দেখতে বেশি আগ্রহী। সামনে না বসে থাকলে পড়তেই চায় না বাচ্চারা। অনেকের বাচ্চা আবার পড়ার সময় পানির তৃষ্ণা, টয়লেট পাওয়া আর হাতে ব্যথা করার কথা বলে। শনিবার (১০ আগস্ট) কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

বাচ্চাদের নানাবিধ অমনোযোগিতার বর্ণনা শুনতে বেশ মজা লাগে। পড়ার সময় একটুও জানালা দিয়ে বাইরে তাকাবে না, আঁকতে বসে টেডিগুলোর গায়ে রং করে দেবে না, এমন বাচ্চা বোধহয় নেই। 

তবে, অমনোযোগিতারও কম-বেশি থাকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাচ্চার বয়স কত, তার উপরে নির্ভর করবে তার মনোযোগ। ৪-৫ বছরের বাচ্চা ও ৮-১০ বছরের বাচ্চার মনোযোগ এক হবে না। মনোযোগ বাড়াতে হবে অভ্যাসের মাধ্যমে। সন্তানকে প্রথম দিনেই টানা দু’ঘণ্টা পড়তে বসালে সে বসবে না। সে ক্ষেত্রে প্রথম এক সপ্তাহে আধ ঘণ্টা তাকে পড়তে বসাতে হবে। ধীরে ধীরে সেই সময়সীমা বাড়াতে হবে। সন্তানের মনোযোগ কম না বেশি, তা মা-বাবা সব সময়ে বুঝতে পারেন না। সেটা তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন।

তবে ছোট থেকে কিছু অভ্যাস তৈরি করে দিলে অমনোযোগিতাকে অনেকটাই বাগে আনা যায়। কেমন করে, দেখে নেয়া যাক।

পেরেন্টিং কনসালট্যান্টরা বলছেন, তিন থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের মনোযোগের সমস্যা কাটাতে প্রধানত পাঁচটা বিষয়ের উপরে জোর দিতে হবে।

রোজ অন্তত এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করে খেলার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এতে ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরে এনডরফিন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হতে থাকে। এর পরেই বাচ্চাকে পড়াতে বসালে প্রথম ঘণ্টাখানেকের পড়ায় তার পুরো মনোযোগ থাকবে।

এখন প্রচুর ইন্ডোর গেমস, বই পাওয়া যায়, যা বাচ্চার কগনিটিভ স্কিল বাড়ায়। যেমন নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি বুক, বিল্ডিং ব্লকস, পাজলস ইত্যাদি। স্মার্টফোনের বদলে এই ধরনের খেলা বা বই ওর হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে। 

সন্ধ্যাবেলা পড়ার মাঝে একটু বিরতি নিয়ে কিছুটা পাজল সলভ করলে বা বিল্ডিং ব্লকস নিয়ে খেললে কখনো মনোযোগে ঘাটতি পড়ে না আর ওদের একঘেয়েমিও কাটে।

ছোট থেকে ওকে মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্টে তালিম দিতে পারেন। বিদেশে অনেক জায়গায় আড়াই বছর বয়স থেকে পিয়ানো শেখানো হয়। অতটা সম্ভব না হলে তবলা, মাউথ অর্গ্যান, সিন্থেসাইজার; যে কোনো একটি বাজানো শেখাতে পারেন। নোট ধরে সুর তোলার মধ্য দিয়ে কনসেনট্রেশন লেভেল অনেকটাই বাড়ে।

ঘুমানোর আগে কিছুটা সময় থাক গল্প বলার জন্য। অভিনয় করে গল্প বললে তারা আগ্রহী হবে। গল্পের মাঝেই ওকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে খুদে শ্রোতাটির ধৈর্য ধরে শোনার প্রবণতাও তৈরি হয়। মনোযোগ বাড়াতে গল্প শোনানোর ভূমিকা বিরাট। সে গল্প শুনছে কি না, তা বুঝতে আপনিও পরে গল্পের মধ্য থেকে প্রশ্ন করে যাচাই করে নিতে পারেন।

লেখার সময় ওকে ছোট ছোট নির্দেশ দিন। প্রথমে তিনটা দিয়ে শুরু, যেমন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ‘পয়েন্টগুলোকে জুড়ে দাও, রং দিয়ে আউটলাইন টানো, ভেতরটা রং করো।

আস্তে আস্তে নির্দেশের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন আর দেখুন ও কতটা মনে রাখতে পারছে। বাড়িতে নির্দেশ মতো ঠিকঠাক কাজ করার অভ্যেস গড়ে তুললে স্কুলেও শিক্ষকদের নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।

ক্লাস ওয়ানে ওঠার পর বাচ্চাকে নিয়মিত খেলাধুলার সঙ্গে রোজ কিছুটা সময় ধরে অঙ্ক কষার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অঙ্ক মানে শুধুই সিলেবাসের বাঁধা গতের অঙ্ক নয়। পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বইয়ের অঙ্কও কষতে হবে, অনেকটা ধাঁধার সমাধান করার ঢঙে। মনোযোগ বাড়াতে অঙ্কই হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস।

সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, দিনে অন্তত ১০টা নানা ধরনের অঙ্ক যদি একটা বাচ্চা কষতে পারে, তা হলে অজানা কিছু সমাধানের ক্ষেত্রে তার মনোযোগ অনেকটা বেড়ে যায়। পরবর্তী জীবনেও বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সে অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই এগিয়ে থাকবে।

সব সময়ে পড়তে বসিয়ে বা আঁকতে বসিয়ে মনোযোগ বাড়ানো যায় না। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট খেলা খেলতে পারেন। মনে করেন, আপনি বাজার করতে গেছেন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যান। তাকে বলুন বাজারে যত লাল অবজেক্ট দেখতে পাচ্ছে, সেগুলো গুণে আপনাকে বলতে। আবার কোথাও হয়তো বেড়াতে যাচ্ছেন, বাচ্চাকে বলুন দুই দিয়ে শেষ হওয়া কয়টি গাড়ির নাম্বারপ্লেট সে দেখতে পেল, আপনাকে গুণে জানাতে। এতেও সন্তানের মনোযোগ বাড়বে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030510425567627