প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মিলিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা যা বাজেটের ১৫.২ শতাংশ। সরকার বলছে, জনপ্রশাসনের পর শিক্ষা খাতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষা খাতকে যুক্ত করে বরাদ্দ বেশি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, শুধু শিক্ষায় বরাদ্দের হার ১১.৬৮ শতাংশ। এটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শুধু শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকে হিসাবে এনে অনেকে বলছেন, প্রকৃত বরাদ্দ আরও কম। বুধবার (১৯ জুন) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশে বরাবরই শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার কম। ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী, একটি দেশের বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু সরকারগুলো ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি বরাদ্দ দেয় না। কোন কোন অর্থবছরে এর চেয়ে সামান্য বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও সেটা কখনোই ২০ শতাংশে পৌঁছেনি। টাকার অংকে বরাদ্দ বাড়িয়ে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর দাবি করে সরকার।
গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকে ব্যয় হিসেবে গণ্য না করে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা জরুরি। সরকারও বিভিন্ন সময় বলেছে, শিক্ষায় বরাদ্দ ব্যয় নয়, বিনিয়োগ। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বাজেটে শিক্ষায় ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতি প্রণয়নের ৯ বছর পরও তা বাস্তবায়িত হয়নি। নেপাল, শ্রীলঙ্কা এমনকি আফগানিস্তানেও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকে। সরকার বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাচ্ছে অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না। আমরা বলতে চাই, শুধু ইমারত আর সেতু নির্মাণ করলেই উন্নয়ন হয় না। সত্যিকারের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা চাই। আর উন্নয়নকে টেকসই করতে চাই গুণগত শিক্ষা। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় একটি দেশ না এগোলে সে দেশ কখনোই উন্নতি করতে পারবে না। আজকে যারা উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে তারা আগে শিক্ষায় উন্নতি করেছে।
আমরা বলতে চাই, শিক্ষায় বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হবে। এবার সেটা সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এজন্য প্রতি বছরই বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। কাজেই এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।