বাণিজ্যমুক্ত করতে হবে শিক্ষাব্যবস্থাকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম বাহন হবে আমাদের বর্তমান সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। বর্তমানে আমরা পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী অর্থনীতির জাঁতাকলে নিষ্পেষিত এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে সবকিছু বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার ( ১১ জুন )যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকয়ীতে আরও জানা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছে শিক্ষাও এখন আকর্ষণীয় বাণিজ্যিক পণ্য। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত চলছে এই ব্যবসা। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছেন। এ জন্য তারা নানা অনৈতিক পন্থা প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত পাঠ্য তালিকার বাইরে অতিরিক্ত বই পাঠ্য তালিকাভুক্ত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ডোনেশনের বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের এ বই কিনতে বাধ্য করে। বস্তুত ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্য বাণিজ্য।

মেধার বিকাশ ঘটানো এবং মেধাবী জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু মেধাবী ও সৃজনশীল জাতি গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যের ‘বারোটা’ বাজিয়ে দিয়েছে এদেশের গাইড ব্যবসায়ীরা।

অধিকাংশ শিক্ষকই যেখানে সৃজনশীল পদ্ধতি ভালোভাবে বোঝেন না, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা কী তা বলাই বাহুল্য। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী গাইডনির্ভর আর শিক্ষকদের তো ‘ঘোড়া দেখে খোঁড়া হওয়া’র অবস্থা। নীতিমালা ভঙ্গ করে গাইড ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধাহীন পঙ্গু জাতিতে পরিণত করছে। কারণ সৃজনশীল আর নোট-গাইড একসঙ্গে চলতে পারে না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের এসব নোট-গাইড কিনতে বাধ্য করছে।

ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যয় চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়ছে। বস্তুত শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছে এ সংক্রান্ত যথাযথ নীতিমালা না থাকার কারণে। আমাদের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সম্পদ। তাদের বাণিজ্যমুক্ত প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। কারণ আমাদের সব লক্ষ্য পূরণের একমাত্র বাহন হচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা। তাদের যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলতে না পারলে তারা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। তাই প্রয়োজন একটি কঠোর নীতিমালা।

শিগগিরই ‘শিক্ষা আইন-২০২১’ প্রকাশিত হবে। তাই এখনই সময়। এ আইনটি এমন হতে হবে যেন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো অংশ নিয়ে কেউ কোনো ধরনের বাণিজ্য করতে না পারে। যেহেতু বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষাব্যবস্থার ক্যানসারস্বরূপ প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়েছে এবং দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশিত হয়েছে, সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি প্রকাশিতব্য শিক্ষা আইনে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধের সব উপায় স্পষ্ট ভাষায় লিপিবদ্ধ থাকবে এবং বাস্তবায়ন হবে। এর ফলে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা বাণিজ্যের কবল থেকে বেঁচে যাবে এবং মেধাবী জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।

লেখক:মিকাইল হোসেন : উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্কুল এন্ড কলেজ, সাভার, ঢাকা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038959980010986