বাবা হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদলেন মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীকেও কাঁদালেন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জিয়াউর রহমানের কথিত সামরিক বিচারে নিহত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট মোরশেদুল আলমের মেয়ে মাকসুদা পারভিন কেঁদে কেঁদে বাবাকে হত্যার দায়ে জিয়াউর রহমানের বিচার দাবি করেন। তার কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পরেননি প্রধানমন্ত্রীও। মাকসুদা পারভিন তাঁর মাথায় প্রধানমন্ত্রীর হাত রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার পাবার আশ্বাস চাইলে প্রধানমন্ত্রী একপর্যায়ে মাকসুদার কাছে গিয়ে মাকসুদার মাথায় হাত রেখে তাকে জড়িয়ে ধরেন।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পরিবারের সদস্য, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসংযোগে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং সম্প্রতি বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় ওই নিহত ব্যক্তিবর্গের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে তাদের বিভিন্ন দাবি জানান।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার অবশ্যই সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গণহারে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের মদদপুষ্ট অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার করবে। আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। কারণ, আমিও একদিন আপনাদেরই মতো শুনেছিলাম যে আমার আর কিছুই নেই (আমার বাবা-মা ও ভাইদের হত্যাকণ্ডের পর)। কিছু অপরাধী ইতোমধ্যে শাস্তি পেয়েছে। আর বাকিরা শাস্তির মুখোমুখি হবে।’

জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে কী করেছিলেন, তা জনগণ ভুলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার বিচার করতে গিয়ে বিচারকদের বিব্রত বোধ করতে হয়েছে।’

সরকার পতনের আন্দোলনের নামে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ কীভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে তা আমি জানি না। তারা (বিএনপি-জামায়াত) কখনই চায় না, দেশের মানুষ ভালো থাকুক।’

সম্প্রতি রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সন্দেহ করছি বিএনপি-জামায়াত জোট এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কারণ তারা অতীতে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করেছে। দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন। আমিও একই লক্ষ্যে কাজ করছি।’ 

সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের প্রহসনমূলক সামরিক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুর নাহার বেগম বর্ণনা করেছেন তাঁর স্বামীকে কীভাবে অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং কীভাবে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘গত ৪৬ বছরে কেউ আমাদের কষ্টের কথা শুনতে চায়নি। কিন্তু, আপনি আমাদের কষ্টের কথা ধৈর্য ধরে শুনেছেন, কারণ আপনি আপনার বাবা-মা এবং ভাইদের হারিয়েছেন। আর সে কারণে আমরা ভেতরে কেমন বোধ করছি, তা আপনি বুঝতে পারেন ।’

৭২ বছর বয়সী নুর নাহার এখন তাঁর জীবদ্দশায়ই অবিলম্বে তাঁর স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘বিচার হলে জিয়াউর রহমান কী করেছেন, তা বিশ্বের সব মানুষ জানতে পারবে।’ তিনি সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের গণকবরের জায়গায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান। নুর নাহার বেগমের বেদনাদায়ক বর্ণনা শুনে প্রধানমন্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জিয়াউর রহমানের কথিত সামরিক বিচারে নিহত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট মোরশেদুল আলমের মেয়ে মাকসুদা পারভিন কেঁদে কেঁদে বাবাকে হত্যার দায়ে জিয়াউর রহমানের বিচার দাবী করেন এবং তাঁর মাথায় প্রধানমন্ত্রীর হাত রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশ্বাস চান। প্রধানমন্ত্রী একপর্যায়ে মাকসুদার কাছে গিয়ে মাকসুদার মাথায় হাত রেখে তাকে জড়িয়ে ধরেন।

পুলিশের উপপরিদর্শক মকবুল হোসেন জানান, ২০১৩ সালে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সাহেববাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় তাঁর দুই হাতের কব্জি হারিয়েছেন।  তিনি বলেন, ‘পুলিশে যোগদানের দেড় মাস পর, আমি আমার কব্জি হারিয়েছি। আমি আমার সন্তানদের হাত দিয়ে আদর করতে পারি না এবং আমার সন্তানরা যখন জিজ্ঞেস করে তোমার হাত (কব্জি) কোথায়? আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। আমি অবিলম্বে বিচার দাবি করছি।’

সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া একটি দোকানে চাকরির দায়িত্ব পালন শেষে এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় তার মুখ ও হাত মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়। তিনি অবিলম্বে অপরাধীদের বিচার দাবি করেন। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। এসময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে তথাকথিত কোর্ট মার্শালের নামে সংঘটিত গণহত্যা এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসন্ত্রাসে মানুষ হত্যা ও আহত করার পৃথক দুটি ভিডিও ক্লিপ অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031991004943848