বাম সংগঠনের করুণ দশা, কর্মী সংকট

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছাত্ররাজনীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাম সংগঠনগুলো বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এর বাইরে ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পাসে সেই চিত্র নেই বললেই চলে। মাঠে নেই অনেক বাম ছাত্রসংগঠন। অনেক সংগঠনের কমিটি থাকলেও দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। ফাঁকা পড়ে থাকে দলীয় টেন্ট। মূলত কর্মী সংকটের কারণেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর এমন দৈন্যদশা বলে মনে করেন নেতারা। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শাহাদাত তিমির।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবধারা পরিবর্তনে একসময় বাম সংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ক্যাম্পাসে ছাত্রী ভর্তি, সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ, সমসাময়িক ও বিজ্ঞানবিষয়ক বিভাগ খোলা থেকে শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রগতিশীল কার্যক্রমে তাদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু সেসব আজ ইতিহাস। সংগঠনগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতি থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম সংগঠনগুলোর মধ্য খুঁড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন। হারিয়ে যাওয়ার পথে ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ)। গত বছরের ২৮ মার্চ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকাহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিস বিভাগের মোর্শেদ হাবিব এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আব্দুর রউফকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ। এই কমিটির আগে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে ছাত্র মৈত্রীর কার্যক্রম ছিল না। এখনও সংগঠনের কর্মী সংখ্যা ২৫ জনেই ঘুরপাক খাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির কর্মীরা।

এদিকে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের ১৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের রেজুয়ানুল ইসলামকে সভাপতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শাহাদাত হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির সভাপতি, সহসভাপতিসহ সিনিয়র নেতারা ছাত্রত্ব শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে না।

মতানুসারী শিক্ষক না থাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম গুটিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলছেন, ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করা বেশির ভাগ শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যে কোনো আন্দোলনকে তাদের বিরোধী মনে করে তা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলার সুযোগ কমে গেছে বাম সংগঠনগুলোর।

ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি মোর্শেদ হাবিব বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকও নেই, যিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে কথা বলবেন। বাম রাজনীতি করে আসা শিক্ষকরা যখন ভোল পাল্টে ফেলেন তখন সেই রাজনীতি করতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করে না। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে ছাত্র মৈত্রীর একটি অবস্থান তৈরি হলেও তা ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’

এদিকে, ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ৩৩ সদস্যের কমিটি দেয় ছাত্রলীগ (জাসদ)। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটিতে আল ফিকাহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিস বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের মোস্তফা ইবনে আব্দুল হককে সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের রুবেল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এক বছর ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালায় দলটি। বিভিন্ন হলে কমিটিও দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে গেছেন দলটির নেতারা। দীর্ঘ এক বছরে কোনো কার্যক্রম নেই দলটির। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ১৮ জানুয়ারি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কমিটির বেশির ভাগ নেতার শিক্ষাজীবনও শেষ হয়ে গেছে।

ছাত্রলীগের (জাসদ) সভাপতি মোস্তফা ইবনে আব্দুল হক বলেন, ‘দেশ এখন বাকশালের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজনীতি করা কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নব্য শিক্ষক রাজনীতিবিদদের জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করা প্রায় অসম্ভব। নব্য শিক্ষক রাজনীতিবিদরা তোষামোদ করে করে প্রশাসনকে শিক্ষার্থী বিমুখ করে ফেলেছেন। যৌক্তিক দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ালেও ছাত্রনেতাদের হয়রানি করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও কর্মীদের হুমকি দেন। ওই শিক্ষকদের হাতে পরীক্ষার নম্বর ও ক্ষমতা থাকায় ভয়ে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’ 

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর খালিদকে সভাপতি ও সাফিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। ১৩ সদস্যের এই কমিটির সবারই শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। কমিটির সহসভাপতি লিটন কুমার দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে দলটির নেতাকর্মী ও কার্যক্রম নেই। এ ছাড়া প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র গণমঞ্চসহ অন্যান্য বাম সংগঠনের কোনো কমিটি নেই। চোখে পড়ে না কোনো কার্যক্রমও।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021898746490479