বাল্যবিয়ে হওয়ায় ছাত্রীকে স্কুলে আসতে নিষেধ করলেন শিক্ষক

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল |

বরিশালের বাকেরগঞ্জে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বাল্যবিয়ের অপরাধে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। বিয়ের কারণে ক্লাসে আসতে নিষেধ করায় গত ১ জুন থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করেছেন ওই স্কুলছাত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গাড়ুরিয়া ইউনিয়নের কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

জানা গেছে, কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর কয়েক মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে হওয়ায় সেখানে কয়েকদিন থেকে তার বাবার বাড়িতে চলে এসে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়। পরে পুনরায় স্কুলে যাওয়া শুরু করলে সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন স্কুলছাত্রীকে আসতে নিষেধ করেন এবং সহপাঠীদের সামনে অপমান করেন। পরে লজ্জায় স্কুলে আসে না ওই শিক্ষার্থী।

সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কাজ করি। আমাদের স্কুলের অন্য ছাত্রীরা যাতে নষ্ট না হয় সে কারণে ও‌‌ই ছাত্রীকে বলেছি, তুমি আসলে আমাদের স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। স্কুলের পরিবেশ রক্ষার করার জন্য তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছি। সেটা আমি মনে করি না আমার বড় কোনো অপরাধ হ‌য়েছে।

কান্তা-হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হচ্ছে শুনলে ইউপি সদস্য অথবা থানায় জানাই যাতে বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। একটা বাচ্চাকে বিয়ে দিলে তার অকালে ঝরে যেতে হয়। আমরা অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের বিয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক করি। তবে এরকম কোনো নিয়ম নাই যে বিয়ে হলে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারব না।

স্কুলছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বলেন, স্কুলে যেতে নিষেধ করায় আমার মেয়ে এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়েটিকে নিয়ে আমি খুব চিন্তায় আছি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস বলেন, শিক্ষার্থীকে স্কুলে আসতে বিরত রাখা হয়েছে। এটা রাখা যাবে না। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ রকম কোনো শিক্ষক করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান বলেন, কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে আমরা শুনতে পেরেছি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিটি আছে শিক্ষকরা কাউন্সেলিং করে থাকে। বাল্যবিয়ের তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই বিবাহ হয়েছে জানতে পেরেছি। মেয়েটি যখন স্কুলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়, ওই স্কুলের একজন শিক্ষক মেয়েটিকে স্কুলে আসতে নিরুৎসাহিত করেছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে, এটা আসলে কোনোভাবে কাম্য নয়। কোনো মেয়ে যদি বাল্যবিবাহর শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অন্যান্য শিক্ষক যারা আছে তারা শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে সতর্ক করবে ও মেয়েটি যেহেতু ভিকটিম তাকে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে বাধা না দিয়ে উৎসাহিত করবে। কিন্তু এখানে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে রাজনৈতিক ইস্যু যুক্ত হয়েছে: কাদের - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে রাজনৈতিক ইস্যু যুক্ত হয়েছে: কাদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল - dainik shiksha কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল রেললাইন অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ - dainik shiksha রেললাইন অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ পাঁচ হাজার টাকায় মেলে এইচএসসির প্রশ্ন সঙ্গে জিপিএ ৫ - dainik shiksha পাঁচ হাজার টাকায় মেলে এইচএসসির প্রশ্ন সঙ্গে জিপিএ ৫ কোটা বাতিলের দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ - dainik shiksha কোটা বাতিলের দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বাইয়,বন্ধ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বাইয়,বন্ধ স্কুল-কলেজ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021049976348877