শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিবাস্তবায়ন হয়নি ৩১ শতাংশ সুপারিশ

মুসতাক আহমদ |

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিগত তিন বছরের সুপারিশের ৩১ শতাংশও বাস্তবায়িত হয়নি। ওই সুপারিশের কিছু বাস্তবায়ন অযোগ্য। কিছু বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। বাকিগুলো কমিটির এখতিয়ারের মধ্যে থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কয়েকটি সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পর্যালোচনাধীন আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমিন বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর ক্ষেত্রে জনগুরুত্ব বিবেচনা করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রত্যেক সুপারিশ বাস্তবায়নের সঙ্গে আর্থিক দিক সংশ্লিষ্ট। এমন ক্ষেত্রে বাজেট না থাকায় মন্ত্রণালয় হয়তো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

দেশে বর্তমানে আট শতাধিক অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের কলেজ আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫০০ ছিল বেসরকারি। সম্প্রতি সরকার প্রায় ৩০০ কলেজ জাতীয়করণ করেছে। এ ছাড়া ১০৭টি মাস্টার্স পর্যায়ের কলেজ আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বেসরকারি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ওইসব বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। কিন্তু তারা কোনো এমপিও পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কলেজের মধ্যে শহরাঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা কলেজের তহবিল থেকে কম-বেশি বেতন পান। কিন্তু এর বাইরের প্রতিষ্ঠানে কোথাও নামকাওয়াস্তে আবার কোথাও একেবারেই বেতনভাতা না পাওয়ার ঘটনা আছে। এসব শিক্ষকের সংগঠনের পক্ষ থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এমপিওর জন্য স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল। কমিটিতে আলোচনার পর অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকদের এমপিও দেয়ার সুপারিশ করা হয় তিন বছর আগে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে। কিন্তু এই সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে কমিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক সমিতির সভাপতি নেকবর হোসেন  বলেন, বেসরকারি কলেজে আমরা যারা অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করি তারা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। বেশির ভাগ শিক্ষক কলেজ থেকে বেতনভাতা পান না। অনেক কলেজ ছাত্রদের কাছ থেকে লব্ধ আয় থেকেও বেতনভাতা দেয় না। আমাদের প্রস্তাব ছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি অনার্স-মাস্টার্সের ছাত্রছাত্রীদের আয়ের টাকা গ্রহণ করে সেখান থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দিক। সেটাও হয়নি। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে এমপিও জরুরি। নইলে কলেজগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষক পাবে না। কলেজ থেকে যেসব গ্রাজুয়েট তৈরি হবে তারা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে না।

সুপারিশগুলোর প্রকৃতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্থায়ী কমিটি শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যেই বেশির ভাগ সুপারিশ পাঠিয়েছে। ওইসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গেলে মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের উচ্চশিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটত। পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা ও শিক্ষক-কর্মচারী অপ্রাপ্তি ও হতাশা দূর হতো।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের  ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫টি বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে মোট ৭১টি সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর মধ্যে ১০ শতাংশ সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন বা কার্যক্রম চলমান আছে। ২১ শতাংশ সুপারিশ অবাস্তবায়িত বা প্রক্রিয়াধীন রয়ে গেছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশের একটি হচ্ছে- শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা সমাবেশ করা। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১৫খ্রিস্টাব্দের  অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ১২তম বৈঠকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় স্কুলগুলোতে মা সমাবেশ করার সুপারিশ ছিল। ১৪তম বৈঠকেও একই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের সমাবেশ করার সুযোগ নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

একই বৈঠকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা ও কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশের পরও আজ পর্যন্ত আইন সংশোধনের সুপারিশই চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, কমিটি এ ছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দাবি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ প্রতি মাসে অবসর বোর্ডে প্রদান, ইউজিসির পক্ষ থেকে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ না করা, বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব-নিকাশ তদন্ত করা, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শাখা চালু, শিক্ষকদের সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর একমাস করে প্রশিক্ষণ দেয়া, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস নম্বর ৬০ করা, মহানগরীগুলোতেও আইসিটি রিসোর্স সেন্টার করা ইত্যাদি সুপারিশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছরে স্থায়ী কমিটি ছয়টি আইনের বিল পরীক্ষাপূর্বক সংসদে রিপোর্ট উপস্থাপনে কাজ করেছে। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (সংশোধিত), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বিল।
 

সৌজন্যে: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024840831756592