বায়ুদূষণে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজে ছুটতে হয় মানুষকে। ছোটো-বড়ো সবাইকে বের হতে হয় রাস্তায়, কেউ যান অফিসে, কেউ স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অন্য কোনো গন্তব্যে। কিন্তু এই শহরে নির্মল বায়ু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছোটো-বড়ো সব মানুষ। শহরের রাস্তাঘাটে ধুলাময়লা ও গাড়ির কালো ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, শহরের রাস্তাঘাট ধুলা আর কালো ধোঁয়ায় এতটাই ছেয়ে থাকে যে কাজ শেষে বাসায় ফিরলে শরীরে পুরু হয়ে থাকে ধুলাময়লা, চুল হয়ে যায় আঠালো। রাস্তাঘাট খোঁড়খুঁড়ির কারণে মূলত বাতাসে ধুলাবালুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে শিশুরাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়, কারণ তাদের সহ্যশক্তি কম।

ধুলাবালু কোনো রকমে নাকে-মুখে ঢুকলে শুরু হয় হাঁচি, কাশি। ধুলাবালু থেকে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগে অনেকে। হাঁচি, কাশি ছাড়ও চোখ-নাক থেকে অনবরত পানি পড়ার সমস্যা, শ্বাসকষ্ট বা ত্বকে র্যাশও দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় শহর। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে বায়ুদূষণ সবচেয়ে প্রকট হারে বেড়েছে। আর এই দূষণের মাত্রা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলার কারণে। শহরের বিভিন্ন স্থান খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলা হয়ে উঠেছে মানুষের নিত্যসঙ্গী। ঢাকা শহরের ১০ বছরের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণের হিসাব অনুযায়ী, মূলত যান্ত্রিক উত্স থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও ধুলা থেকে বাতাসে ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে।

মূলত কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কণার সৃষ্টি হয়। ইটভাটা, শিল্পকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণের সামগ্রী থেকে ধুলা ও বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। সাধারণত বাতাসে ঘনমিটার আয়তনে এসব ক্ষুদ্র বস্তুকণিকার পাঠ বিবেচনা করা হয়।

একে পিএম ২.৫ মাইক্রো বা মাইক্রোমিটার বলা হয়। এই উপাদান এতই ক্ষুদ্র যে মানুষের চুলের সঙ্গে তুলনা করলে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাত্ একটি চুলের ব্যাস গড়ে ৬০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। অর্থাত্ একটি চুলকে চিরে ২৪ ভাগ করলে যে ব্যাস পাওয়া যাবে, পিএম ২.৫-এর আকার তার সমান।

অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এসব কণা সহজেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে ঢুকে পড়ে। একসময় এই উপাদান সবচেয়ে বেশি নির্গত হতো চীনে। গত দুই বছর চীনকে টপকে ঐ স্থান দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে জাপানের টোকিও শহর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মোট পরিমাণ চীন ও ভারতের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তবে যেসব দেশে বায়ুদূষণ বাড়ছে, সেসব দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্পকারখানার সংখ্যা বেড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে যে নির্মাণকাজ হচ্ছে, তাতে সকাল ও বিকাল দুই বেলা নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে ইট ও বালু পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর বেশির ভাগ নির্মাণসামগ্রী নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ফেলে রাখার কারণে বিপুল পরিমাণ ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে বায়ুদূষণ চলতে থাকলে শিশুমৃত্যুসহ যেকোনো মৃত্যুই অনাকাঙ্ক্ষিত হারে বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত মনে করেন, ইটভাটাগুলোকে দ্রুত আধুনিকায়ন করতে হবে।

নির্মাণকাজে যাতে ধুলা কম হয়, সে জন্য দেশের প্রচলিত আইন মানলেই যথেষ্ট। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকির ঘাটতি রয়েছে। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে তদারকি বাড়াতে হবে। যে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের রাজধানী তথা ঢাকা শহর হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে, সেই বায়ুদূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে বলেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজিকে। রিটের শুনানিতে আরো বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ যেসব একাকায় চলছে, সেসব এলাকায় প্রচুর ধুলাবালু পরিবেশকে দূষিত করছে। আর এই দূষণে বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশুরা।

আমাদের মেট্রোরেল প্রয়োজন, রাস্তাঘাট, কলকারখানা প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধও জরুরি। উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি আমাদের সন্তানের সুরক্ষা এবং সুন্দর জীবনের কথাও ভাবতে হবে। তাই এসব বায়ুদূষণ রোধ করেই রাস্তাঘাট কিংবা যেকোনো উন্নয়নের কাজ করতে হবে।

লেখক : মাহফুজা অনন্যা, কবি ও শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029470920562744