বিএম কলেজে অধিকারবঞ্চিত ২০ হাজার শিক্ষার্থী

পুলক চ্যাটার্জি |

বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না প্রায় দেড় যুগ। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় এ কলেজের ২০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন নানাভাবে। ভর্তি এবং পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি।

কিন্তু ছাত্র সংসদ না থাকায় এর প্রতিবাদ করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে ছাত্র নেতৃত্বের বিকাশও ঘটছে না। সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী গড়তে দেশের প্রত্যেকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

১৮৮৯ সালে বরিশালে বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র সংসদ (বাকসু) গঠিত হয় ১৯৫২-৫৩ সেশনে। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পরে তা থমকে যায়। সর্বশেষ এ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট। ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত বাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন জাতীয় রাজনীতির সর্বোচ্চ আসনে আছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি ১৯৬৪ সালে বাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম ফিরোজ ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭০ সালে। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বাকসুর ভিপি ছিলেন ১৯৮১ সালে। ১৯৯২ সালে বাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন বরিশাল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও জিএস হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বলরাম পোদ্দার। ১৯৯৪ সালে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন বরিশাল নগর যুবদলের বর্তমান সভাপতি আকতারুজ্জামান শামীম।

আ স ম ফিরোজ দেড় যুগ ধরে বাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রকৃত রাজনৈতিক চর্চা গড়ে ওঠে না। ফলে অরাজনৈতিক নেতৃত্ব ঢুকে পড়ে রাজনীতিতে। তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী গড়ে ওঠে না। তাই শুধু বাকসু নয়, সব কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নতুন নেতৃত্ব গঠনের জন্য বাকসু নির্বাচন প্রতি বছর হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা এবং অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। 

বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে বাকসুর পৃথক দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় ওই ভবনের জীর্ণদশা। ভবনের বারান্দায় রাখা হয়েছে নির্মাণ কাজে ব্যবহূত বাঁশ। দ্বিতল ভবনটির সর্বত্র মলিনতার ছাপ। বাকসুর তালাবদ্ধ ভবনের চাবি কার কাছে তাও জানেন না কেউ। অভিযোগ রয়েছে, সন্ধ্যা নামলেই বাকসু ভবনের বারান্দায় জমে মাদক সেবনের আড্ডা।

তবে চাবি না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, যেহেতু বাকসু ভবনটি বিশেষ কারণে স্পর্শকাতর, তাই যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে চাবি সহসা কাউকে দেওয়া হয় না। 

সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট সর্বশেষ বাকসু নির্বাচন হলেও ওই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেয় ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের যৌথ প্যানেল।

ওই নির্বাচনে ছাত্রমৈত্রীর ভিপি প্রার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম সুজন। ছাত্রলীগ নির্বাচন বর্জন করেছিল। তার পর আর বিএম কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। তবে ২০১১ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের লিখিত নির্দেশে ছাত্র সংসদের আদলে নির্বাচন ছাড়াই ভিপি-জিএসসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর সমন্বয়ে গঠন করা হয় ২৬ সদস্যের ছাত্র কর্মপরিষদ। ওই কর্মপরিষদ বাতিলের দাবিতে আদালতে মামলাও হয়েছিল। তবে চাপের মুখে বাদী মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। এক-দেড় বছরের মাথায় ভেঙে পড়ে ছাত্র কর্মপরিষদের কার্যক্রম।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রমৈত্রীর বিএম কলেজ শাখা বাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল। তখন ছাত্রলীগও একাত্মতা ঘোষণা করে ওই আন্দোলনে অংশ নেয়। অদৃশ্য কারণে ওই আন্দোলনে কোনো সুফল মেলেনি। তবে বিএম কলেজের বর্তমান ছাত্র নেতৃত্ব অবিলম্বে বাকসু নির্বাচন দাবি করেছেন। ছাত্রমৈত্রীর বিএম কলেজ শাখার সভাপতি জয় চক্রবর্তী বলেন, বিএম কলেজের সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে যৌথভাবে নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার আহ্বায়ক কিশোর কুমার বালা বলেন, নির্বাচন চাইলেই কলেজ প্রশাসন নানা অজুহাত দেখায়। তাই নির্বাচনের জন্য সব ছাত্র সংগঠনকে আগে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিএম কলেজে ছাত্রলীগের নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা গোলাম মোস্তফা অনিক বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব আগ্রহী হলেই বাকসু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে বাকসু নির্বাচন হওয়া এখন সময়ের দাবি।

এদিকে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রদল ও শিবিরের কোনো তৎপরতা নেই। বাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান সিকাদর বলেন, সারাদেশের কলেজগুলোর মতোই বিএম কলেজেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রক্রিয়া যেহেতু শুরু হয়েছে, তাই বাকসু নির্বাচনেরও দাবি উঠতে পারে। ছাত্র সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে চাইলে কলেজ প্রশাসন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরু করবে।

সৌজন্য: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046939849853516