বরিশালে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মৃত্তিকা গবেষণাগার নষ্ট করে টেনিস গ্রাউন্ড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বোটানিক্যাল গার্ডেন ধ্বংস করে টেনিস গ্রাউন্ড নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী, সাবেক অধ্যক্ষ ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রায় একশ বছরের পুরানো ব্যতিক্রমী উদ্ভিদ রয়েছে কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অন্য কোন কলেজে এরকম বোটানিক্যাল গার্ডেন নেই। ঐতিহ্যবাহী কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিনষ্ট করে টেনিস গ্রাউন্ড নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে ওই কাজ বন্ধ করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সৌন্দর্য রক্ষার দাবি জানান তারা।
ব্রজমোহন কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিরল প্রজাতির নাগলিংগম, শ্বেত চন্দন, আফ্রিকানন টিউলিপ, সিন্দুর গাছ, গন্ধ ভেদুলীরয়েল পাম, স্বর্পগন্ধাসহ ২৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর বাইরেও অর্কিড ও গুল্ম প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ আছে।
কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া আহসান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমাদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিরল প্রাজাতির নাগ লিংগমসহ নানা জাতের গাছ রয়েছে। তাই বোটানিক্যাল গার্ডেনের সৌন্দর্য নষ্ট হোক সেটা আমরা চাই না। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে যেন কোন খেলার মাঠ করা না হয়। একই দাবি করেন উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শিপ্রা রানী, তমা মিত্র, রেজাউল ইসলাম, মিজানুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান মো. শাওনসহ অনেকে।
কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ আবদুল্লাহ রাহাত এবং বদরুদ্দোজা সৈকত দৈনিকশিক্ষা ডটকমে বলেন, ব্রজমোহন কলেজটি ৬৫টি একর জমির ওপর নির্মিত। যদি টেনিস গ্রাউন্ড করতেই হয় তাহলে সেটা বোটানিক্যাল গার্ডেনের বাইরেও করা সম্ভব। আমরা দাবি করছি, কর্তৃপক্ষ যেন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনেক ব্যতিক্রমী উদ্ভিদ আছে। যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাশে দেখানো হয়। বর্তমানে এখানে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেখানে টেনিস গ্রাউন্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এটির সংরক্ষণ ও আরও গাছ লাগানোর দাবি করছি।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ মো. হানিফ দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমি নিজে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনেক প্রজাতি গাছ লাগিয়েছিলাম। আজ (মঙ্গলবার) এসে দেখি সেসব গাছের একটিও নেই। আমি বোটানিক্যাল গার্ডেন রক্ষার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই। একই কথা জানান, সাবেক অধ্যক্ষ মো. শামসুদ্দিন আহম্মেদ এবং স.ম. ইমানুল হাকিম।
বিএম কলেজ শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাগর দাস আকাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী, জেলা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি শন্তু মিত্র, জেলা ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক নীবন আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের রেজাউল হক প্রমুখ।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনেক আগে একটি টেনিস গ্রাউন্ড ছিল। কলেজের শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে টেনিস গ্রাউন্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বোটিনক্যাল গার্ডেন সংরক্ষণ করেই কাজ করা হচ্ছে। তারপরও সবার মতামত নিয়ে কাজ করা হবে। আপত্তি থাকলে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।