বিকল্প কর্মসংস্থান নিয়ে ভাবুন

ড. নিয়াজ আহম্মেদ |

আজকাল শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে এবং এর বাইরে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ কমে আসছে। বিশেষ করে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি মাত্রায় লক্ষ করা যায়। এরপর রয়েছে মৌলিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অবস্থান। তবে তুলনামূলকভাবে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিজ্ঞানের শিক্ষার গুরুত্ব এখনো বেশি বিধায় তাদের মধ্যে অমনোযোগিতা কিংবা হতাশা কোনোটাই বেশি কাজ করে না। এমন শিক্ষার প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে বিধায় এর প্রসার নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিষয়টি এ কারণে বলছি, এখানে বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগে আগে পড়াশোনা না করে হঠাৎ ভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার সঙ্গে চাকরির সম্পর্ক শতভাগ না হওয়ায় অতি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে ওঠে। প্রথাগত চাকরি পেতে হলে মৌলিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি জানা আবশ্যক। এরপর রয়েছে অন্যান্য বিষয়। বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা যে একবারে লাগে না তা নয়, তবে একটু পড়াশোনা করলে সমস্যা হয় না। সমস্যা অন্য জায়গায়। চাকরির নিশ্চয়তা না থাকা।

প্রথাগত চাকরির সংখ্যা খুব একটা বাড়ে না। প্রতিবছর প্রায় একই পরিমাণ জনবল বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া হয়। বিভিন্ন চাকরিতে পদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তার চেয়ে ঢের বাড়ে নতুন গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা। বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এক শতে উন্নীত হয়েছে। উদ্দেশ্য সবাইকে উচ্চশিক্ষার আওতায় আনা। লক্ষ করলে দেখবেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় টিকে রয়েছে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষার বদৌলতে। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয় তাদের রয়েছে; কিন্তু স্বল্প টিউশন ফি অফার করেও তারা ভালো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। কারণ চাকরির নিশ্চয়তা কম। দ্বিতীয়ত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক বিষয় রয়েছে। এখানে নামমাত্র টিউশন ফি হওয়ার কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করছে। মৌলিক ও বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা কাজ করে। তাদেরও সব জায়গার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে তুলনা করলে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানভুক্ত গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্বের হার অন্যদের তুলনায় বেশি।

আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো চাহিদাপত্র না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনুমানভিত্তিক বিষয় নির্বাচন হচ্ছে। প্রতিবছর আমাদের কয়জন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পদে জনবল দরকার, তার কোনো হিসাব নেই। এ কথা সত্য, বর্তমানে আমাদের দেশে শিল্প-কলকারখানার প্রসার ঘটছে। সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে কত জনবল লাগবে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। কোনো কিছু নির্দিষ্ট না হওয়ায় অনেকটা অনুমাননির্ভর ও অন্যকে দেখে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিষয় নির্বাচন করছে। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে নিজের অনিচ্ছায় কোনো একটি বিষয়ে পড়ছে। বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের জন্য ভালো হতো। মন দিয়ে লেখাপড়া করার আগ্রহ তৈরি হতো। লেখাপড়ার সঙ্গে চাকরি কিংবা জীবিকা নির্বাহের সম্পর্ক রয়েছে, তা প্রথাগত চাকরি হোক কিংবা আত্মকর্মসংস্থান হোক অর্থাৎ নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই হোক।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় থেকে শিক্ষার্থীকে তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে হবে। তার নিজের মেধা ও মনন বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। বুঝতে হবে প্রথাগত চাকরি তার পক্ষে পাওয়া সম্ভব কি না। বাংলা কিংবা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, শুধু সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে প্রকাশনার ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। তাতে প্রকাশনার মান উন্নত হবে। যিনি বা যাঁরা ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা করছেন শুরুতেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করার চিন্তা করতে পারেন। তাঁদের পেশাগত জ্ঞান আর্থিক খাতে সাফল্য আনতে পারে। আবার যিনি রসায়ন কিংবা ফার্মাসিতে পড়াশোনা করছেন, তিনি বা তাঁরা মিলে ওষুধশিল্পে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেন। যাঁরা টেক্সটাইলে পড়ছেন তাঁদের ঠিকানা হতে পারে গার্মেন্ট সেক্টরে। যিনি সমাজকর্মের ছাত্র, তিনি এনজিও প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এখানে পুঁজি অন্যতম একটি বাধা। ব্যবসায় ঝুঁকিও রয়েছে। এমন অবস্থায় সরকার ও বড় বড় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারেন। সরকার যেমন সরাসরি এমন নবীন উদ্যোক্তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, তেমনি বড় শিল্পপতিরা সদ্য পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাঁদের মেধাকে চাকরিজীবী হিসেবে না নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।

 

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054581165313721