দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: জয়পুরহাট সদরে ফাঁসির রায় দেওয়া এক বিচারককেই ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে ছুরি হাতে ওই বিচারকের উদ্দেশে একজন দুষ্কৃতকারী বলে, ‘তুই বেদিন ও তার লোকজনকে ফাঁসি দিয়েছিস। এখন আমরা তোর ফাঁসি দিতে এসেছি।’ পরে পুলিশ চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগী ওই বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দিন। এ ঘটনায় তিনি সদর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে ঘরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি জয়পুরহাটে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র মোয়াজ্জেম হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—বেদারুল ইসলাম বেদিন, সরোয়ার হোসেন সুমন, মশিউর রহমান এরশাদ, মনোয়ার হোসেন মনছুর, নজরুল ইসলাম, রানা, শাহী, টুটুল, সুজন, রহিম ও ডাবলু। তাদের বাড়ি জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে নজরুল ইসলাম, বেদারুল ইসলাম, টুটুল, সুজন, আবদুর রহিম ও ডাবলু পলাতক। ২০০২ সালের ২৮ জুন ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে মোয়াজ্জেম হোসেনকে জয়পুরহাট শহর থেকে তুলে নিয়ে আসামিরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে নির্যাতন করে। পরে তাকে জয়পুরহাট-জামালগঞ্জ সড়কের একটি জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ২২ বছর পর বিচার শেষ হয়।
গত সোমবার গভীর রাতে বিচারক দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হন। বিচারক আব্বাস উদ্দিন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ঘটনার রাত সাড়ে ৩টায় শয়নঘরের দরজার লক খোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং আমার স্ত্রীকে উঠাই। আমার স্ত্রী জেলা পুলিশের কনস্টেবল প্রতিবেশী মো. আরিফুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানায়। আমি সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানাই। এরই মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা দরজার লক খুলে ঘরে প্রবেশ করে। সবার সামনে থাকা একজন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে বলে যে, ‘তুই বেদিন ও তার লোকজনকে ফাঁসি দিয়েছিস। এখন আমরা তোর ফাঁসি দিতে এসেছি।’
দুষ্কৃতকারীরা আমার দিকে অগ্রসর হওয়া মাত্রই কনস্টেবল মো. আরিফুল ইসলাম আমার ঘরের বেলকনিতে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘স্যার আমি আরিফ পুলিশ এসেছি। আপনার কী হয়েছে?’ পুলিশের কথা শোনামাত্রই দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় দুষ্কৃতকারীরা ঘর থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। কনস্টেবল আরিফুল একজনকে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বিচারক আব্বাস উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জেলা জজকে জানিয়েছি। পুলিশ সুপার এবং ওসিকেও জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ঘরের মধ্যে অজ্ঞাতনামা অন্তত তিনজনকে দেখেছি। সোমবার গভীর রাতের ওই ঘটনার পর আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
বাসার মালিকের স্ত্রী জাকিয়া ফারহানা চৌধুরী জানান, নিচতলায় বিচারক দম্পতি ভাড়া থাকেন। দুর্বৃত্তরা ভয় দেখিয়ে স্বর্ণলংকার নিয়ে গেছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবীর জানান, অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে। দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার নূরে আলমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিচারকের বাসার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।