বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার কি হচ্ছে?

আনোয়ারা নীনা |

পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, দুধ আদর্শ খাদ্য ইত্যাদি অনেক কিছু আমরা জানি। এটাও জানি দুধ গাভীই দেয়। কিন্তু আমার গাভী নেই বা গাভী কেনার টাকাও নেই অথচ আমি শিখেছি দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। তাই দুধ কেনার পাত্রটা কিনলাম। তবে কি দুধ খাওয়া হবে? আদর্শ খাদ্য কি খাওয়া হবে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের ঠিক তাই হলো। সরকার লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি দিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আদৌ কি সেই যন্ত্রপাতি রাখার বা ব্যবহারের সহান আছে তাদের? কিন্তু মনের আনন্দে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা  সেসব গ্রহণ করেছি। তারপর? সেগুলো কোনোভাবে রাখা ছাড়া আর উপায় কী? সরকারি জিনিস হিসাব রাখতে হবে, দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে রাখলাম সেটার মনে হয় আর জবাব দিতে হবে না।

সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ব্যবহারিক বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। তবে পরিকল্পনাটা বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান। বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কি আদৌ পারছি তাদের হাতে কলমে শিক্ষা দিতে? বিভাগীয় শহর বা জেলায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এই ব্যবহারিক পরীক্ষা বা ব্যবহারিক ক্লাস হচ্ছে না। বিষয়টি সরকারের নজরে এলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যন্ত্রপাাতির আগে বিদ্যালয়ে ল্যাব নির্মাণ প্রয়োজন। তারপরও জিজ্ঞাসা—একজন শিক্ষার্থী যে তার ব্যবহারিকের পুরো সিলেবাস শিখতে পারল না, এর দায়ভার কে নেবে? অথচ এই অর্ধশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের আমরা ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯০-২০০ নম্বর অনায়াসে দিয়ে দিচ্ছি। পরবর্তী জীবনে এই ব্যবহারিক শিক্ষা কী কাজে লাগবে জানা নেই। আবার মানবিকের শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেই তার পুরোটা ফলাফল অর্জন করল আর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কিন্তু ২০০ নম্বর এমনিতেই পেল। জানতেও হলো না শিখতেও হলো না। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে ব্যবহারিক খাতায় আঁকতে হয়, লিখতে হয়। কিন্তু আদৌ কি সেই শিক্ষার্থী নিজে খাতায় আঁকছে বা লিখছে? আমার দেখা—ময়মনসিংহ বিভাগের বড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেইটের সামনে লেখা (কমেপাজ করা) ‘এখানে সুলভ মূল্যে অত্যন্ত নিপুণভাবে ব্যবহারিক খাতা করা হয়।’ বিষয়টা ভেবে দেখুন। কী আমাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা!

একজন ভালো শিক্ষক (বিজ্ঞানের) ভালো স্কুলে, ভালো কলেজে পড়াশোনা করে মফস্বলের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। তাঁর অর্জিত জ্ঞান কাকে দেবেন? দেওয়ার মতো স্থান কাল পাত্র কোথায়? আস্তে আস্তে নিজের জ্ঞানটুকুও হারাতে হচ্ছে। এই দায়ভার কার?

আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। বড় বড় সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। কিছু কিছু  সমস্যার সমাধান অচিরেই না হলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিপর্যয় অনিবার্য। শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য নৈতিক বিকাশ। আর সেটাই নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রধানশিক্ষক, হালিমুন্নেছা চৌধুরাণী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভালুকা, ময়মনসিংহ

সূত্র: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027379989624023