জাতীয়করণ বিরোধী কর্মকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের বিরোধি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা ও  ফেসবুকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ  করে ফেঁসে যাচ্ছেন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ফারহানা বিলকিস। তিনি ভূগোলের সহকারি অধ্যাপক। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হয়েও প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

২৩ জানুয়ারি জারি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি ওই কর্মকর্তা তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে একাধিক মন্তব্য করেন। একটি হলো ‘আমলাতন্ত্র নিপাত যাক, শিক্ষা ক্যাডার মুক্তি পাক, আমার মন্ত্রণালয় আমি চালাব, আমার দেশ আমি গড়ব’ এবং আরেকটি মন্তব্য ছিল, ‘শত শত কোটি টাকার বাণিজ্যে বেসরকারি কলেজশিক্ষকদের বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে শিক্ষার বারোটা বাজানো কর্মকর্তা এবং বর্তমানের নতুন করে ১৮০০০ জনকে পরীক্ষা ছাড়া বিসিএস ক্যাডার বানানোর জন্য ৩০০ কোটি টাকা যেসব রাঘব বোয়াল পকেটে ভরেছেন, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’

এ ছাড়া তিনি আরেকজন ফেসবুক বন্ধুর অনুরূপ বক্তব্যে ‘জাতীয় দাবি, আমার দাবি, দশের দাবি, দেশের দাবি’ বলে মন্তব্য করা হয় বলে নোটিশে বলা হয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, এসব বক্তব্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। তাই জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বৃহস্পতিবার (২৫শে জানুয়ারি) সকাল ১০টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মোল্লা জালাল উদ্দিনের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের পক্ষে যাবতীয় প্রমাণপত্র ও বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে তাকে।

বুধবার (২৪শে জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক নোটিশ থেকে এ খবর জানা গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা ইনসিট্যু হিসেবে রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজে কর্মরত আছেন তিনি।

জাতীয়করণের বিরোধীতা এবারই প্রথম নয়। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা অক্টোবর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি’ ব্যানারে জাতীয়করণের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ফারহানা বিলকিস সে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। ‘নো বিসিএস নো ক্যাডার’ দাবিতে সেসময় সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলন শেষে কমিটির পক্ষ থেকে কিছু নামধারী সাংবাদিকের মাঝে টাকা ভর্তি খাম দেন ফারহানা বিলকিস। ডিআরইউর সাগর-রুনী মিলানায়তনের নিচে সিড়ির গোড়ায় এই খাম ভর্তি টাকা বিলি করতে দেখা যায় তাকে। তবে, অনেক সাংবাদিকই খাম না নিয়ে বরং শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনার জাতি গড়ার কারিগর। আপনাদের নৈতিক  ও মানসিক অবস্থা যদি এই হয় তাহলে তো  গোটা জাতির ভবিষ্যত খুবই অন্ধকার।’

সেদিন ঘটনাস্থল থেকে টাকা দেয়ার দৃশ্য ভিডিওধারণ করেছিলেন দৈনিক শিক্ষার দুজন সাংবাদিক। ‘সংবাদ সম্মেলন শেষে খামে ভরে টাকা দিলেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা (ভিডিও)’ শিরোনামে দৈনিক শিক্ষায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সাংবাদিকদের টাকা দেয়ায় সেসময় চরম সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।

জানা যায়, সরকারি কলেজ বিহীন উপজেলা সদরে একটি করে কলেজ ও স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু এর বিরোধীতায় নামে বি সি  এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে শেখ হাসিনার সরকার ১৮ টি মহিলা কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ার পরপরই বিরোধীতায় নামে শিক্ষা সমিতি। শেষে সব পক্ষের সম্মতিতে আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। সেভাবেই সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ফের ওই ২০০০ বিধি বাতিল দাবি করে সংবাদ সম্মেলন, মানবন্ধন এমনকি ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করেন। তারা নো বিসি এস নো ক্যাডার স্লোগানের আড়ালে জাতীয়করণেরেই বিরোধীতা করছেন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076141357421875